Sunday 26 December 2010

সেন্ট মার্টিন (দুশো বছর পরে)

মুখবন্ধঃ ২০০৮ সালের ৩১শে ডিসেম্বর সেন্ট মার্টিনে ছিলাম দুদিন। আরো থাকার খুবই ইচ্ছে ছিলো কিন্তু নিরন্তর ব্যস্ততা দিলো না আমায় অবসর। “ফার ফ্রম দি ম্যাডিং ক্রাউড” এ ধরতে গেলে প্রায় রিমোট অঞ্চলে যেয়ে আমার মন প্রশান্তিতে ভরে ছিলো। গাড়ি নাই, কারেন্ট আসে মাত্র দু এক ঘন্টার জন্যে, গরম পানি নাই, মোবাইলের নেট ওয়ার্ক নাই, ল্যাপটপ নাই, ফেসবুক নাই, ব্লগ নাই আহা কি শান্তি কতোদিন পর। এই মুগ্ধতার রেশ বহুদিন আমার মনে ছিলো আরো বহুদিন থাকবে আমি জানি। আমি স্বভাবগত ভাবেই ক্ষ্যাত টাইপের মানুষ, বহুদিন বিদেশে থেকেও ক্ষ্যাতত্ব ঘুচে নাই। কয়লা ধুলে যা হয় আর কি। আমার কেনো যেনো ওয়েল এ্যরেঞ্জড ভ্যাকেশেনের থেকে এসব খাওয়ার ঠিক নাই, শোওয়ার ঠিক নাই টাইপ ভ্যাকেশন খুব ভালো লাগে। নীল দিগন্ত নামে এক রিসোর্টে গেছি রিসোর্ট দেখতে, পাশে লেকমতো কেটেছে তারা তাতে দেখি সাপ দৌড়াদোড়ি করে খেলছে, পানির ওপর থেকে দেখে প্রশান্তিতে মনটা ভরে গেলো। আমি খুশি হয়ে অন্যদের দেখাতে, তারা চেহারা বাংলা পঞ্চম করে রিসোর্ট বাতিল করে দিলো, বেক্কল আমি আবার ধরা।

কিন্তু সেই চাঁদনী রাত, রিসোর্টের বারান্দা থেকে শোনা সমুদ্রের গর্জন, আর প্রায় গ্রাম্য লোকদের কন্ঠে শোনা অতি আধুনিক গান, “মনে বড়ো জ্বালারে পাঞ্জাবীওয়ালা”, পাশে কয়লায় বারবিকিউ হচ্ছে, নানা রকমের তাজা সামুদ্রিক মাছ, যান্ত্রিক আমার জীবনের জন্য একটি অতিপ্রাকৃতিক দৃশ্য। একটা ঝড় এলে আমাদের আর কেউ কোনদিন খুঁজ়ে পাবে না এই অনুভূতি ছিলো স্বর্গীয় আমার কাছে। অনেকদিন ভেবেছি আচ্ছা সেন্ট মার্টিনটা কি অযত্নে বাংলাদেশে পরে রয়েছে। এখানের লোকজন টুকটুক করে বার্বেডোজ, সেসেলস, মরিশাস, ইবিজা আইল্যান্ডে ছুটিতে যায়। সেন্ট মার্টিনটা বাংলাদেশে না হয়ে যদি পশ্চিমের কোথাও হতো তাহলে সেটা দেখতে কেমন হতো? সময় আর আলসিতে লেখা হয়ে ওঠে নাই এ ভাবনাগুলো এতোদিন। সেদিন শনিবার রাতে আয়োজন করে সিনেমা দেখতে বসলাম “নাইট এট দি মিউজিয়াম” এডভেঞ্চার কমেডি মুভি। ছবিটা দেখে আবারো “এমন হলে কেমন হতো” লেখাটা লেখার ইচ্ছাটা কুটকুট করতে লাগলো মনে। এবার তাই লিখেই ফেললাম।

আচ্ছা “সেন্ট মার্টিন” দ্বীপটি যদি ইউরোপে হতো তাহলে আমরা কিভাবে সেখানে যেতাম? কিংবা আজ থেকে দুইশ বছর পর আমরা কিভাবে সেন্ট মার্টিন যাবো? সবচেয়ে সস্তার উপায় সম্ভবত থাকতো, “শাটল ট্রেন”। টেকনাফ থেকে মাটি খুঁড়ে সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত সমুদ্রের নীচ দিয়ে ট্রেন রাস্তা বানানো হতো। গাড়ি নিয়ে শাটলে ওঠে যাবে লোক, গাড়ি প্রতি ৫০০০ টাকা। কিছু দেখতে পাবে না, গরীবের বেশি দেখাদেখির দরকার নাই। সমুদ্রের এদিক থেকে গাড়ি নিয়ে ডুববে, ঐদিক থেকে ভুস করে ওঠবে। আধ ঘন্টায় সেন্ট মার্টিন। যারা উচ্চ মধ্যবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত তারা যেতে পারবেন বোটে। “ডিজিটাল কেয়ারি সিন্দাবাদ”, কিংবা “দি রয়্যাল ঈগল এক্সপ্রেস”। নীচে সবাই গাড়ি রেখে, ওপরে ডেকে যেয়ে বসবেন। দু – ঘন্টার জার্নি। দিনের বেলা গাড়ি প্রতি ১০.০০০ হাজার টাকা আর রাতের বেলা গেলে ১৮.০০০ হাজার টাকা। রাতের বেলা নীচে থাকবে নিকষ কালো সমুদ্র, ওপরে খোলা নীল আকাশ, আকাশের সারা গায়ে ফুটে থাকবে অসংখ্য দুধ সাদা বেল ফুলের মতো তারা, পূর্নিমা হলে “নিশি রাত সাথে নিয়ে তার বাঁকা চাঁদ”। তার সাথে মৃদ্যু মন্দ ঠান্ডা বাতাস, সুদূরে চারপাশ নীরব নিঝুম, ঝিম ধরা। অসহ্য একটা ভালো লাগায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এখুনি মরে যাচ্ছি এমন একটা অনুভূতি হবে। এগুলোতো ফ্রী হতে পারে না। তাই রাতের ট্রিপ দামি।

বোটে থাকবে রেষ্টুরেন্ট লাং লীং লাংলা, এর মধ্যে পাওয়া যাবে সেট মেন্যু। ফ্রায়েড রাইস প্লাস প্রন টেম্পুরা আর ভেজটেবল কারি ৩৫০০ টাকা প্রতি প্লেট, ড্রিঙ্কস এক্সক্লুডেড। কিংবা প্লেইন নাসি উইথ সুইট এন্ড সাওর বিফ বল উইথ স্পিনাচ ইন থাই সস ৩০০০ টাকা প্রতি প্লেট। পাশের সাউথ ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্টে পাওয়া যাবে মাশালা দোসা ১৫০০ টাকা অথবা শাহি পানির উইথ রুমালি রুটি ১৮০০ টাকা প্রতি প্লেট। লাচ্ছি আর জিরা পানি অর্ডার দিলে বানানো হবে তাজা তাজা। আর অবশ্যই থাকবে পকেট ফাঁকা কিন্তু পোজপাজিয়া ষ্টুডেন্টদের জন্য কফি কর্নার। এক কাপ চা/কফি ১৫০ টাকা, দুটো সমুচা কিংবা রোল ৫০০ টাকা, ক্লাব স্যান্ডউইচ ৩০০ টাকা । সফট ড্রিঙ্কস ২৫০ টাকা প্রতি ৩০ সিএল এর বোতল। বড়লোকেরা যাবেন প্লেনে চেপে। ফরেনাররা যাবেন ফার্ষ্ট ক্লাশে নইলে ফার্ষ্ট ক্লাশ ফাঁকা যাবে, কারন বাংলাদেশের অতি বড়লোকেরা সেন্ট মার্টিন যান না তারা যান সিঙ্গাপুর। আর ঘুষ খাওয়া কিংবা সদ্য এক্সিকিউটিভ, সিইও পদে পদোন্নতি পাওয়া বড়লোকেরা যাবেন ইকোনোমী ক্লাশে বউকে সঙ্গে করে। ফার্ষ্ট ক্লাশ ৬৫.০০০ হাজার টাকা আর ইকোনোমী ৪০.০০০ টাকা। প্লেনে তারা হালকা/ফুলকা স্ন্যাকস/ড্রিঙ্কস পাবেন কারন এতো কাছের ফ্লাইটে মিল দেবার নিয়ম নেই।

সেন্ট মার্টিন পৌঁছানোর পর বেশির ভাগ সবাই চলে যাবেন আগে থেকে ইন্টারনেটে বুকিং দেয়া রিসোর্টে কিংবা হোটেল ও মোটেলে। বেশির ভাগ হোটেলেই সুইমিং পুল, সাওনা, জিম ও ডিস্কো আছে। দিনের বেলা সব চলছে চলবে ঢিলেঢালা। কেউ কেউ গায়ে লোশন মেখে সমুদ্র স্নান করবেন, কিংবা সাঁতার, ডাইভিং, বাঞ্জি জাম্প, সেইলিং, সার্ফিং। যারা পরিবার কিংবা বান্ধবী নিয়ে যাবেন তারা সৈকতে বসে বালির রাজপ্রাসাদ বানাবেন আর ভাংগবেন, পরদিন আবার বানাবেন। জমে ওঠে দ্বীপ সন্ধেবেলা থেকে। রোদের তাপ কমে গেলে সবাই তাদের বেষ্ট আউটফিটে বেরোবেন। ডিস্কোগুলোও তাদের লাল নীল নিয়ন বাতি জ্বালিয়ে দিবে। মাঝে মাঝে কেউ যখন দরজা খুলে ঢুকবে কিংবা বেরোবে তখন হালকা আওয়াজ পাওয়া যাবে, “মনে বড় জ্বালারে পাঞ্জাবীওয়ালা”র সুরের। তখনো ডিস্কো সব ঢিলাঢালা থাকবে। ভীড় থাকবে রেষ্টুরেন্ট আর বারবিকিউ ক্যাফেগুলোতে। বড় বড় লবষ্টার, তেলাপিয়া, রুই, ইলিশ একদিকে গ্রীল হবে অন্যদিকে খাসির রান, মুরগী। সাথে ফিলার হিসাবে আলু, আপেল, ভুট্টা, বেগুন, টম্যেটো। দ্বীপের অথরিটি ট্যুরিষ্টদের জন্যে খোলা আকাশের নীচে বারবিকিউ এর সুন্দর ব্যবস্থা রেখেছেন। একসাথে দু’শ লোক বারবিকিউ করতে পারবেন কিন্তু তারপরো এখানে সমুদ্রের পাড়ে এতো ভীড় হয়ে যায়, আগে থেকে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, জায়গা দখল করার জন্যে। গ্রীল দেয়া আছে, বাকি কয়লা, প্লেট – গ্লাস, মাছ – মুরগী সব নিজেকে যোগাড় করে নিতে হবে। তাতেও সমস্যা নেই, কাছে অনেক সুপারমার্কেটের এরকম রেডি প্যাকেজ আছে মিট প্যাকেট ফর টু কিংবা ফিশ প্যাকেজ ফর ফোর ইত্যাদি ইত্যাদি।

অনেকেই মাংসকে পুড়তে দিয়ে নিজে গিটার নিয়ে বসে পরবেন। পাশ থেকে গান ভেসে আসবে, “ঐ দূর পাহাড়ে লোকালয় থেকে দূরে, মন কেড়েছিলো এক দুরন্ত মেয়ে সে কবে……”। গানের সুরে মুগ্ধ হয়ে কেউ কেউ পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে গান শুনবেন। কেউ কেউ তার সঙ্গী কিংবা সঙ্গিনীকে জড়িয়ে ধরে সামান্য নাচবেন। এ জায়গাটুকু মাছ – মাংসের গন্ধে, গানে, চুড়িং টুংটাং, ফিসফাস, কাপড়ের খসমস, হঠাৎ কেঁদে ওঠা শিশুর শব্দ, আধো হাসি আধো কথায় ভরে থাকবে। যারা ভীড় ভাট্টা পছন্দ করেন না তারা কাঁচ দেয়াল ঘেরা বারবিকিউ রেষ্টুরেন্টে চলে যাবেন তাদের পার্টনারকে নিয়ে। কাঁচ ভেদ করে কোন গন্ধ কিংবা শব্দ তাদের কাছে পৌঁছুবে না। মৃদ্যু আলোয়, খুব কম ভলিউমে বাজবে সেখানে রবির সেতার কিংবা বিটোফোন বা মোর্জাৎ। ক্রিষ্টালের গ্লাসে ফ্রেঞ্চ কিংবা ইটালিয়ান – স্প্যানিশ ওয়াইনের সাথে ওয়েল সার্ভড ডিনার সারবেন তারা।

(চলবে)

তানবীরা
২৭.১২.২০১০.

Wednesday 22 December 2010

কার্পেট ব্যাপারীর জাহাজের খবর

আদিম যুগে যখন মানুষ বাড়িঘর তৈরি করতো তখন আমাদের পিতা আমাদের জন্য ঢাকা শহরের কোন এক কোনায় একটা মাথা গুজবার ঠাঁই তৈরি করেছিলেন। এখন মর্ডান যুগ, চারদিকে হাল ফ্যাশনের ফ্ল্যাট আর আমাদের বাড়িঘর নিতান্তই পুরানো। আমরা বুকে দীর্ঘশ্বাস চেপে একষ্ট ভাইবোনেরা মেনে নিয়েছি, সবার ভাগ্যে সব থাকে না। কিন্তু আমার মা জননী এই কষ্ট সহ্য করতে পারেন না। ওনার বান্ধবীদের নতুন চকচকা ঝকঝকা ফ্ল্যাট, কিচেন ক্যাবিনেট, টাইলস, স্লাইডিং ডোর আরো কতোকি। আর আমাদের প্রায় ছাল ওঠা মেঝে, ঘুনে ধরা দরজা। জননীর দীর্ঘ শ্বাসে প্রকম্পিত হয়ে আমি বললাম, ঠিকাছে টাইলস করাতো আপাততঃ সম্ভব নয়, তোমার ঘরটাকে পুরো কার্পেট করে নাও, তাহলে মেঝে দেখতে হবে না, তোমার বান্ধবীদের কাছেও প্রেষ্টিজ ঠিক থাকবে।

যে কথা সেই কাজ। বাসার বিল টিল দেয়া, খুচরো কাজের জন্য একজন আছেন। তাকে বললাম মা জননীর ঘরখানা মেঁপে দিতে। মাঁপা শেষ হলে আমি পিতাজি আর আমাদের বাহিনী রওয়ানা হলাম এলিফ্যান্ট রোড, বহুদিন পর। চার – পাঁচ দোকান ঘুরে কার্পেটের কোয়ালিটি আর দাম সম্বন্ধে যাচাই বাছাই সেরে এক দোকানে বসলাম অর্ডার করতে। কাগজ পত্র, টাকা পয়সার কাজ শেষ হওয়ার পর তখন চলছিলো কার্পেট কাটার পর্ব। দোকানদার মালিক অমায়িক ভদ্রলোক। মাশাল্লাহ আমার মতো কথা না বলে থাকতে পারেন না।

তিনি পিতাজিকে জিজ্ঞেস করলেন, অফিসের জন্যে?

পিতাজি মাথা নেড়ে না করলেন।

তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে কি জন্যে?

পিতাজি বিরক্ত গলায় বাসার জন্যে।

আজকাল হয়তো টাইলসের যুগে লোকে এমন ওয়াল টু ওয়াল কার্পেট লাগান না। তাই কি উদ্দেশ্যে আমরা এই ভর দুপুরে ওনার কার্পেটের দোকানে হানা দিয়েছি তা জানতে ওনি বদ্ধপরিকর ছিলেন। আর ঐদিকে রোজায়, কারেন্ট ছাড়া গরমে আমার পিতাজি ছিলেন ত্যাক্ত বিরক্ত ও ক্লান্ত। পিতাজি ঘাড় আর মাথার ওপর দিয়ে আলোচনা সংক্ষেপ করতে যেয়ে করলেন সেই বিপত্তি।

পিতাজি কথা বলছেন না দেখে ফিরসে শুরু করলেন তিনি। উপায়নন্তর না দেখে আমাকে দেখিয়ে বললেন, মেয়ের বাসায় কার্পেট লাগায় দিচ্ছেন?

পিতাজি চরম বিরক্তের গলায় বললেন, মেয়ে থাকে বিদেশ, ওকে কার্পেট লাগায় দিবো আবার কি?

কিন্তু পিতাজি জানেন নাই, তিনি কি অধ্যায়ের সূচনা করলেন। কার হাতে বন্দুক দিলেন? তিনি এখন পিতাজিকে ছেড়ে আমাকে নিয়ে পড়লেন

তিনিঃ আপনে বিদেশ থাকেন

আমিঃ মাথা নেড়ে “হ্যা”

তিনিঃ কুন দেশ, লন্ডন না আমেরিকা

আমিঃ পিতাজির দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে, আস্তে বল্লাম, হল্যান্ড

তিনিঃ বিগলিত গলায় “মাশাল্লাহ” “মাশাল্লাহ”। কতোদিন আছেন?

আমিঃ প্রায় এক যুগ

তিনিঃ ঐখানের পাসপোর্ট আপনাদের?

আমিঃ মাথা নাড়ালাম আবার “হ্যা” সূচক

তিনিঃ আবার বিগলিত “মাশাল্লাহ” “মাশাল্লাহ”। জামাই বাবাজি কি করেন?

আমিঃ চাকরী।

তিনিঃ ছেলে মেয়ে কয়জন

আমিঃ এক মেয়ে

তিনিঃ কতো বয়স

আমিঃ সাত

তিনিঃ চরম দুঃখিত গলায়, আর একটা ছেলের দরকার না? মেয়ের বয়স সাত হয়ে গেলো, এইটা কি করছেন? এইটা কি ঠিক হইতেছে?

আমিঃ নিশ্চুপ

তিনিঃ ঈদ করতে আসছেন, বাবা মায়ের সাথে?

আমিঃ না, ঈদের আগেই চলে যাবো

তিনিঃ বিস্মিত, ঈষৎ ক্রোধিত, এইটা কি কইলেন আপনে, মুরুব্বীর সাথে ঈদ না কইরা মুরুব্বীর মনে কষ্ট দিয়া আপ্নে ঈদের আগেই চলে যাবেন। দেশে আসছেন, মা বাপের সাথে ঈদটা অন্তত করে যান।

আমিঃ নিশ্চুপ

তিনি এরপর অন্যদিকে মন দিলেন।

তিনিঃ বাবারে কার্পেট লাগায় দিচ্ছেন?

আমি টাশকিত, আকাশ থেকে ধপ্পর। আমরা কি সেই ছেলে মেয়ে যে বাবা মাকে কিছু করে দিবো? আমরা হলাম সেই ছেলে মেয়ে যারা বাবা মাকে দিয়ে যতো পারি করায় নিবো।

আমিঃ দ্রুত “ইধার উধার” না সূচক ঘাড় নাড়া দিলাম।

তিনি তখন আমাকে ক্ষান্ত দিয়া আবার পিতাজিকে নিয়ে পরিলেন।

তিনিঃ মুরুব্বী কি করেন?

পিতাজিঃ তিক্ত মুখে ব্যবসা

তিনিঃ কিসের ব্যবসা

পিতাজিঃ জাহাজের

তিনিঃ উৎসাহিত কন্ঠ “মাশাল্লাহ” “মাশাল্লাহ” কোথায় যায় জাহাজ, কিসের জাহাজ প্যসেঞ্জার না কার্গো?

পিতাজিঃ সংক্ষেপ কার্গো।

তিনিঃ উদ্বেলিত কন্ঠে, কতো ফুট বাই কতো ফুট?

পিতাজিঃ আছে

তিনিঃ কেমন দাম? কয়টা?

পিতাজিঃ আমারগুলা অনেক পুরান, চলে আর কী।

তিনিঃ উৎসাহিত গলায় মার্কেট রেট কতো?

পিতাজিঃ ………।

তিনিঃ নতুন বানাইলে কেমন খরচা পরব

পিতাজিঃ ………………।

তিনিঃ মাসে খরচা দিয়া কেমুন থাকে আপনার?

এসময় আমাদেরকে খবর দিলো কার্পেট প্যাকড হয়ে গাড়িতে উঠেছে। আমরাও উঠতে পারি

জীবনে অনেক সার্কাস এর সম্মুখীন হয়েছি এবং ভবিষ্যতেও হবো। কিন্তু বাগধারা মিলে যায় এমন সার্কাস খুব কমই কমন পরছে।

ডিং ডং

তানবীরা

২৩.১২.২০১০

Sunday 19 December 2010

গভীর ভাবের পোষ্ট

প্রবাসে আমার দশা অনেকটা “ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলা”, “নাই বনে শিয়াল রাজা” কিংবা “আলু”র মতো। “আলু” মানে সব তরকারীতেই যায় আর কি। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে কেউ নেই, ঠিকাছে “ওনি, কাচ্চা বাচ্চাদের নাচ দেখিয়ে দেয়ার কেউ নেই, ঠিকাছে “ওনি”, সেমিনারে বিদেশী গেষ্ট আসবে, ইংরেজী - ডাচ বলতে একজন মেয়ে দরকার, তাইলে “ওনি”, প্রধানমন্ত্রী আসবে মানপত্র পাঠ করতে লাগবে, আচ্ছা আর কাওরে না পেলে “ওনি”তো আছেনই। সবার লাষ্ট চয়েস। এহেন আমি কয়দিন ধরে গভীর ভাবে আছি।

প্রথম ভাব অবশ্য আসার আগেই কেটে গেছে। ঢাকা এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছি ফকিরের মতো অসহায় হয়ে নিজের স্যুটকেসের আশায়। এ্যমেরিকানদের ঢাউশ ঢাউশ লাগেজের ভিতরে আমার রোগা পটকা স্যুটকেসের আর দেখা নেই। ঘন্টা পার হয়ে গেলে দেখা যাচ্ছে আমরা অনেক ইউরোপীয়ানই কনভেয়র বেল্টের চারপাশে লাট্টু খাচ্ছি আর ইয়া নফসী ইয়া নফসী করছি। ঐদিকের কাঁচের জানালা পাশ দিয়ে কয়শো টাকার জানি টিকেট কেটে ছোটবোন আর ভাইঝি ঢুকে হাত নেড়ে যাচ্ছে। মেয়ে ষোল ঘন্টার জার্নির শেষে এই কষ্ট আর নিতে পারছে না, এক ঠ্যাঙ্গে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকা এক জায়গায় তাও যখন ঐপারে মধুর হাতছানি। কেঁদে কেটে, ঘ্যান ঘ্যানিয়ে চরমভাবে সে প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। এমন সময় এক তীক্ষন ভাষিনী কানের পাশে বলে উঠলেন, “আপনাদের স্যুটকেস পাইছেন”? আমি ফিরে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম না ওনি কাকে বলছেন। নিশ্চিত হওয়ার জন্য জানতে চাইলাম আমাকে বলছেন? তিনি মাথা নেড়ে নিশ্চিত করলেন, আমাকেই বলছেন। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না হঠাত আমাকে কেনো?

তিনি আমার প্রশ্নবোধক মুখভঙ্গী লক্ষ্য করে বললেন, আমাকে চিনতে পারেন নাই, আমি আমষ্টারডাম থাকি। ঐ যে বৈশাখে আপনার সাথে দেখা হলো, আপনি নাচলেন অনুষ্ঠানে। আমি আমার স্মৃতির মনিকোঠায় বারি মেরেও কিছু বের করতে না পেরে, চুপচাপ মাথা নেড়ে সায় দিলাম। মহিলা তাতেও দমলেন না, তিনি বললেন, আপনে না চিনলেও সমস্যা নাই, ভাইয়ের সাথে পাশের বেল্টের কাছে দেখা হইছে, কথা হইছে, ওনি চিনছেন আমাকে। আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক, পরিবারের কেউতো ভদ্রতা রক্ষা করেছে। তখন আমি আমার স্যুটকেস আর ঐ আজাবখানা থেকে বেরোনো ছাড়া কিছু ভাবতে না পারলেও পরে ঘটনাটা মনে পরে বেশ ভাব ভাব ভাব আসলো মনে। “ইষ্টার ইষ্টার” ভাব।

দ্বিতীয় বারের অবস্থা আরো খারাপ। আমরা বড় গ্রোসারী করতে পাশের দেশে বেলজিয়ামে যাই। সেখানে তুলনামূলকভাবে সস্তা প্লাস অনেক বেশি চয়েস থাকে। কিন্তু বাংলা বাজার যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কি এর বিরাট সমস্যা। আমরা বিশ কেজির বাশমতি, রুই, কই, ইলিশ, পাবদা, কাকরোল, পটল, আলাদ্দিনের মিষ্টি, প্রানের ঝাল চানাচুর, খেজুরের গুড় ইত্যাদি কিনে দাঁড়িয়ে আছি। তিনি গেছেন গাড়ি আনতে। শনিবার একেতো অনেক ভীড় সাথে ঠোলাদের আনাগোনা। এচাল থেকে বেচাল মানেই জরিমানা, টিকিট। সাধারনতঃ দোকান থেকে কেউ আমাদের বাজার গাড়িতে তুলতে সাহায্য করেন, সেদিন অনেক ভীড় তাই দোকানের কেউ গা করছেন না। আমিই একবার মেয়ে দেখছি, আর একবার প্যাকেট দেখছি ভীড়ের মধ্যে কেউ যেনো আমার লটকে শুটকি না নিয়ে যায় আর একবার দেখছি গাড়ি এলো কি না। এরমধ্যে একজন বেশ গোলগাল ভুড়িওয়ালা ভাইজান এসে বললেন, “স্লামালিকুম আপা, কেমন আছেন, মেয়েতো দেখি মাশাল্লাহ অনেক বড় হয়ে গেছে।“ টাশকিত আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জিজ্ঞেস্ করলাম, আমাকে বলছেন? তিনি বিমলানন্দে বললেন, “হ আপনারেই। কয়দিন আগে না আপনের নাটক দেখলাম, মনে নাই আমারে?”

আমি আমতা আমতা করছি চরম বিরক্ত নিয়ে। ওনি বিরাট হাসি দিয়া বললেন, অসুবিধা নাই, না চিনলে, পরের প্রোগ্রাম যেনো কবে, আবারতো দেখা হইবো। এবার কি করবেন, নাটক না নাচ? সেই মূহুর্তে গাড়ির টেনশান বিরক্তি আর ইলিশ মাছ পটলের মাঝে আমাকে কেউ “ইষ্টার” হিসেবে সনাক্ত করুক তা আমি কিছুতেই চাইছিলাম না। কিন্তু কিছু বলতেও পারছি না। ফোনে আমার ভাইকে এ গল্পটা এটুকু একদিন বলতেই ভাই বিরক্ত হয়ে বললো, চরম বেকুবতো তুই। তুই বলবি না, হ্যা চিনসি আপনারে, এখন আমার চালের বস্তাটা একটু গাড়িতে উঠায় দেন। কিন্তু তখন সেই বুদ্ধি মাথায় যোগায় নাই। পরে মাছ তরকারী সমেত শান্তিতে গাড়িতে বসার পর আবার আমার মনের মধ্যে ভাব খেলা করতে লাগলো। এই ভাব সহ্য করতে না পেরে এই পোষ্টের অবতারনা।

ডিং ডং

একটি অতিরিক্ত ভাবমূলক ছড়াঃ

ডুবে আছি বরফের তলে

কষ্ট যন্ত্রনা প্রতি পলে

বাসার ভিতরে হিটিং জ্বলে

এটাকে কি সুখে থাকা বলে?

মেঘলার স্মৃতিতে ছড়াখানি আজ এরূপে ধরা দিয়েছে

হাট্টিমা টিম টিম

তারা গাছে মারে ডিম

তাদের ঘাড়ে দুটো শিং

তারা হাট্টিমা টিম টিম

তানবীরা

Wednesday 15 December 2010

তারানা হালিমের সাথে কিছু কথা

বাসুগ আয়োজিত "মাইগ্রেশন ও রেমিট্যান্স" শীর্ষক সেমিনারে যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য মহিলা সাংসদ তারানা হালিম। তার সাথে একান্ত কথাবার্তার কিছুটা এখানে পাঠকদের জন্য তুলে দিলাম।

১. বাসুগের আজকের কার্যক্রম “ মাইগ্রেশন ও রেমিট্যান্স” সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।

আমার খুবই ভালো লাগছে এ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে দেখে। “রেমিট্যান্স” এর সুব্যবহার নিশ্চিত করা এবং এ সম্পর্কে জানা সবারই কতর্ব্য। দেশে প্রবাসীদের পাঠানো টাকা খরচ করে কিভাবে উৎপাদনশীলতা আরো বাড়ানো যায় সে নিয়ে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। বাসুগের এই উদ্যেগকে তাই আমি স্বাগত জানাচ্ছি।

২. নেদারল্যান্ডস প্রবাসী বাংলাদেশীদের সর্ম্পকে বলুন।

প্রবাসী বাংলাদেশীদের আমার সবসময়ই বেশি ভালো লাগে। দেখা যায় দেশের বাইরে থেকেও অনেক বেশি তারাই বাংলা সংস্কৃতির চর্চা করেন, সংস্কৃতিটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করে। অনেক অতিথিপরায়ন ও আন্তরিক হন তারা।

৩।. মুক্তচিন্তা আর মুক্তভাষনের জন্য বাংলাদেশ কতোটুকু নিরাপদ?

আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটকে আমি “মুক্তচিন্তা” আর “মুক্তভাষনে”র জন্যে নিরাপদ বলবো। বিগত সরকারগুলোর সাথে এ সরকারের অনেক পার্থক্য আছে। এ সরকারের সময় প্রত্যেকে তার নিজের বক্তব্য প্রকাশের অধিকার আছে।

৪. আজকের এই অবাধ প্রচার মাধ্যমের যুগে, যেকোন কারনে ওয়েব সাইট ব্লক করা, কিংবা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া, কিংবা সত্যকে রুখতে বিভিন্নভাবে বাধা দিতে চেষ্টা করা কতোটুকু নৈতিক?

এ ধরনের কিছু হয়েছে এ সরকারের আমলে আমিতো স্মরন করতে পারছি না। অনেক পত্রিকা প্রকাশ হচ্ছে, সবাই যার যার মতো সংবাদ পরিবেশন করছেন, কাউকে বাধা দেয়া হয়েছে বলে জানি না।

তানবীরাঃ জ্বী বাঁধা দেয়া হয়েছে
তারানাঃ আপনি যদি স্পেসিফিক কিছু উল্লেখ করেন
তানবীরাঃ ইউটিউব আটকে দেয়া হয়েছিল
তারানাঃ দেশের সার্বভৌমত্ব কিংবা সুরক্ষার জন্য হুমকিস্বরূপ কিছু থাকলে সেটার জন্য হয়তো বাধা দেয়া হতে পারে কিন্তু এমনিতে ............
তানবীরাঃ কিন্তু সেটা কি নৈতিক? কোন না কোন সোর্স থেকে লোকে সংবাদতো ঠিকই পাচ্ছেন, আর দেশের সুরক্ষার ব্যাপারে জানার অধিকারতো জনগনের আছে
তারানাঃ জ্বী না, আমার মতে নৈতিক না কিন্তু অনেক সময় সেই সময় উদ্ভূদ পরিস্থিতির বিচারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

৫. বাংলাদেশে আজকে “নারী’র অবস্থান কি সন্তোষজনক?

নারীর ক্ষমতায়নের কথা যদি বলেন তাহলে হ্যা সন্তোষজনক। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রনালয়ে নারী মন্ত্রী আছেন। সংসদেও যথেষ্ঠ নারী সাংসদ আছেন। অনেক সরকারী গুরুত্বপূর্ন পদেই আজকাল নারীরা কাজ করছেন।

তানবীরাঃ ক্ষমতার বাইরে?
তারানাঃ এইতো সবে জাগরণের শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে সেটা আরো বাড়বে সে আশা রাখি। এখন নারীর ক্ষমতায়নের কথা শুরু হয়েছে, তবে সেটাকে আইন করে পঞ্চাশভাগে নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যতে যেকোন কিছুতে নারী পুরুষের সমান অংশগ্রহন নিশ্চত করতে হবে।

৬. জঙ্গীবাদের আশঙ্কা কি নারী উন্নতির অন্তরায় বলে আপনি মনে করেন?

অবশ্যই। তাদের উদ্দেশ্যই থাকে উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি। নারী পুরুষ সবার ক্ষেত্রেই তবে তাদের সূত্রনুযায়ী নারীরা হয়তো বেশি তাদের শিকার।

৭. অভিনয়, আইন কিংবা রাজনীতি কোনটাকে আপনি বেশি উপভোগ করেন?

প্রত্যেকটা কাজের আলাদা আলাদা আনন্দ আছে আমার কাছে। অভিনয় আমার শখ, আইন আমার পেশা আর সংসদ আমার দেশের মানুষের কাছাকাছি থাকার, তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলার সবচেয়ে উত্তম জায়গা।

১০. একসময় আপনি ভালোও গানও করতেন, সেটি ছেড়ে দিলেন কেনো?

হাসতে হাসতে, সবাই তাই ভাবে কিন্তু গানটা আসলে আমার গাওয়া নয়। গানটি ছিল সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া। আমি শুধু লিপ্সিং করেছিলাম তাতে। আমার গলায় গান ......... তবে আমি ভালো নাচ করতাম। কিন্তু সংসারের এতো ব্যস্ততা, মা হিসেবে, আইনবিদ হিসেবে, রাজনীতি নিয়ে কিছুতো স্যাক্রিফাইস করতে হয়, তাই নাচটা ছেড়ে দিয়েছি।

১১. আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন।

ভবিষ্যতেও আমি দেশের মানুষের পাশে থাকতে চাই। নারীর সমঅধিকার নিয়ে, সমাজে নারীর অবস্থানকে আরো শক্ত করতে, তাদের মর্যাদা নিয়ে যে কাজ আমি করে যাচ্ছি সেটাকে পূর্নাংগ রূপ দিতে চাই। দেশের জন্য কিছু করব এটুকুই আমার চাওয়া।

১৪. আজকাল দেশে ধর্মের উগ্র চর্চা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। এটিকে কি বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের প্রতি হুমকিস্বরূপ মনে করছেন?

অবশ্যই হুমকিস্বরূপ। উগ্রমৌলবাদ কোন জাতির জন্য ভালো কিছু আনতে পারে না। তাই এ সময়েই এর মোকাবেলা করে একে বাঁধা দিয়ে, রুখে দিতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে জাতি আরো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। সরকার এ ব্যাপারে অনেক সচেতন। পুরনো হামলার অনেক জাল এখন খুলছে। যেমন ধরুন একুশে আগষ্টের গ্রেনেড হামলা। দেশের একজন মন্ত্রীর সাথে যদি জঙ্গী হামলার সরাসরি সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে আর কিইবা বলার আছে।

১৫. ধর্মনিরপেক্ষ গনতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্বেও কবি “তাসলিমা নাসরিন” কেনো দেশে ফিরতে পারছেন না? একজন মানুষ তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। আপনার মত জানতে চাই।

একজন মানুষকে তার দেশে ফিরতে বাঁধা দেয়া অবশ্যই অমানবিক কিন্তু আসলে আমি ঠিক জানি না তার অন্যদেশের নাগরিকত্বে কারনে দেশে ফিরতে তার আইনগত কোন বাঁধা আছে কি না কিংবা

তানবীরাঃ আইনগত বাধা থাকলে বাংলাদেশের যেসব কনস্যুলেট বাইরে আছেন তারা সেটার সমাধানের জন্য এগিয়ে আসতে পারেন নাকি এটাকে আমরা সরকারের সদিচ্ছার অভাব বলে দেখব
তারানাঃ আসলে তিনি এমন কিছু কথা বলেছেন, এতো দ্রুত জাতিকে বড়ো একটা ঝাকি দিতে চেয়েছেন, এই একই কথাগুলো কিন্তু আমরাও বলছি, আমাদের উদ্দেশ্যও কিন্তু তাই, কিন্তু আমরা এগোচ্ছি ধীর লয়ে
তানবীরাঃ একজন লেখক কিভাবে লিখবেন সেটাকি তার নিজের স্বাধীনতা নয়
তারানাঃ আসলে তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না, একজন মানুষ হিসেবে এ ব্যাপারটা আমার কাছেও খুবই দুঃখজনক।

সময়ের সংক্ষিপ্ততার কারনে আমাদের আলাপচারিতা এখানেই শেষ করতে হলো।

তানবীরা
১৪.১১.২০০৯

ফাহমিদা নবীর সাথে কিছুক্ষন

বাসুগের আয়োজনে তৃতীয় বারের মতো “বাংলাদেশ ডে” উদযাপিত হলো নেদারল্যান্ডসে। এবারের আয়োজনের মূল আকর্ষন ছিলেন সুকন্ঠী গায়িকা “ফাহমিদা নবী”। বাসুগের পক্ষ থেকে তার সাথে করা কিছু একান্ত আলাপচারিতার অংশ বিশেষ পাঠকদের জন্য।

১. নেদারল্যান্ডসে এসে আমাদেরকে দেখে কেমন লাগছে?

এতোদূরে যদিও আপনারা অল্প সংখ্যক বাঙ্গালীই আছেন কিন্তু দেশের প্রতি, বাংলা ভাষার প্রতি, সংসস্কৃতির আপনাদের এতো টান, দেখে খুব ভালো লাগছে।

২. প্রবাসীরা অহরহ মাতৃভূমিকে ছেড়ে আসার যন্ত্রনায় পোড়ে, দেশের মানুষরা কি সেটা অনুভব করতে পারেন?

জ্বী বুঝতে পারেন। আপনারা অনেক কষ্ট করেন, তাদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভাবেন, এতোদূর থেকে তাদের সুখ সুবিধার কথা ভেবে টাকা পয়সা পাঠান, তারা সেটা অনুভব করেন।

৩. গানের হাতেখড়ি কি বাবার কাছেই?

না, ঠিক তা নয়। বাবা আমাদের জন্য ওস্তাদ রেখে দিয়েছিলেন, ওস্তাদ আমানউল্লাহ খান।

৪. কতো বছর বয়েস থেকে গান করছেন?

ঠিক মনে নেই। খুব ছোটবেলা থেকেই। জন্মের পর থেকেই বলতে পারেন

৫. কোন ধরনের গান গাইতে আপনি নিজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

মেলোডিয়াস। যাতে ভালো সুর আছে। হৈ চৈ গান আমার দ্বারা হয় না আর শ্রোতারা তা ঠিক গ্রহনও করেন না।

৭.বাবার প্রেরনাই কি গানকে পেশা হিসেবে নিতে উৎসাহিত করেছে?

না ঠিক তা নয়। আমার মাও ভালো গান করতেন। বাবার সম্মানটা আমার হয়ে কাজ করেছে। কিন্তু গানের প্রতি আমি নিজেই খুব টান অনুভব করতাম। ছোটবেলা থেকেই শাহনাজ রহমতুল্লাহ, আশা - লতার বাংলা গান শুনতাম। আমি নিজের মধ্যেই সুরের আনাগোনা টের পেতাম। সে জন্যই আমি গান করছি।

৮. বাবাকে খুব মনে পড়ে নিশ্চয়ই? বাবাকে নিয়ে মধুর একটি স্মৃতি আমাদের পাঠকদেরকে বলুন।

সব স্মৃতিই মধুর স্মৃতি। বাবা খুব মিষ্টি খেতে ভালোবাসতেন। স্বাস্থ্যগত কারনে মা বাধা দিতেন। প্রায়ই বাবা আমাদেরকে বলতেন, রুমা সুমা চল বাইরে থেকে হেটে আসি। তখন আমরা এ্যালিফ্যান্ট রোডে থাকি। বাসা থেকে কয়েক কদম হাটলেই সামনে মরণ চাঁদের মিষ্টির দোকান। বাবা আমাদের নিয়ে চলে যেতেন মিষ্টির দোকানে। বসে মিষ্টিত অর্ডার দিতেন। নিজেও খেতেন আমাদেরকেও খেতে সাধতেন। আমরা যদি সবটা না খেতে পারতাম, জিজ্ঞেস করতেন, কি রে খেতে পারছিস না ? আমাদের প্লেটে যতোটুকু থাকতো তাও খেতে নিতেন। অনেক সময় হয়েছে, দোকানে বসে থাকা অবস্থায় পরিচিত কাউকে পেলেন কিংবা অপরিচিত কেউ এসে বললো আপনার গান আমার ভালো লাগে নবী ভাই। তিনি তাদেরকে ডেকেও মিষ্টি খাওয়াতেন। তারাও যদি সবটা না খেতে পারতো তাদের প্লেটের অবশিষ্টাংশও বাবা খেয়ে নিতেন।

আর বাবা ছিলেন খুবই ভুলো মনের মানুষ। সব ভুলে যেতেন। বাড়িতে হয়তো কোন মেহমান এসেছেন, মা বললেন যাও দোকান থেকে মিষ্টি নিয়ে এসো। বাবা মিষ্টি আনতে গিয়ে দেখা গেলো আর ফিরছেন না। সন্ধ্যায় মেহমান এসেছিলো হয়তো, মা তাদের রান্না বান্না করে খাইয়ে বিদায় করেছেন। রাত এগারোটায় বাবা বাইরে থেকে ভক্তদের সাথে আড্ডা মেরে, গান গেয়ে টেয়ে, মিষ্টি খেয়ে দেয়ে ফিরেছেন। বাড়ি ফিরে মেহমানদের কথা মনে পড়েছে তার আবার।

৯. একজন গায়িকাকে বাংলাদেশের সমাজ কি চোখে দেখেন?

আমি আমার কথাই বলছি। খুবই সম্মান ও শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। আমি যদি কাউকে কিছু বলি তারা আমার অনুরোধ রাখেন, কথা শুনেন। কিন্তু সেই সম্মান, শ্রদ্ধার আসন আমি নিজে দিনে দিনে তৈরী করে নিয়েছি।

১০. গানকে পেশা হিসেবে নিতে মেয়ে হিসেবে কোন সামাজিক কিংবা ধর্মীয় বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কি?

আসলে বাবা - মা গান করতেন বলে আমি এমন একটা পরিবেশে বড় হয়েছি যে আমি এগুলোর সম্মুখীন হইনি। আর নিজে গান গাওয়ার আজকের এইযে অবস্থান সেটা আমি তিলে তিলে নিজেই তৈরী করে নিয়েছি।

১১. সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের মেয়েদের আজকের অবস্থান ব্যাখা করুন।

আজকে মেয়েদের অবস্থান হয়তো আগের চেয়ে ভালো কিন্তু আশাপ্রদ হওয়ার মতো কিছু না। শহরে কিংবা উচ্চবিত্ত শ্রেনীর মেয়েরা হয়তো সুযোগ পাচ্ছেন কিন্তু গ্রামে গঞ্জের সাধারণ মেয়েরা আজো তাদের অনেক ধরনের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

১২. জঙ্গীবাদ কি বাঙ্গালী সংস্কৃতি চর্চার পক্ষে বাধাস্বরূপ? যেমন একুশে ফেব্রুয়ারী কিংবা পহেলা বৈশাখ?

অবশ্যই। ধর্ম একটা গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার কিন্তু জাতীয়তাবাদের চেয়ে বেশি নয়। আজকে আমাদের পরিচয় কি বিশ্বে, আমরা বাঙ্গালী। আমাদের ভাষা আমাদের সংস্কৃতিইতো আমাদের পরিচয়।

১৩. গান নিয়ে আপনার ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কি?

বাবার গানের স্কুলটাকে আরো বড় করবো তাতে ভালো গান শেখানোর ব্যবস্থা করবো।

১৪. ধর্মনিরপেক্ষ গনতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্বেও কবি “দাউদ হায়দার” ও “তাসলিমা নাসরিন” কেনো দেশে ফিরতে পারছেন না? আপনার অনুভব কি?

আমি এটাকে অত্যন্ত অমানবিক একটা ব্যাপার বলে মনে করি। কখনো কখনো ভাবি, আমরা কি এখনো আদিম যুগে পরে আছি যেখানে মানুষ চকমকি ঠুকে আগুন জ্বালাতো? একটা মেয়েকে তার মা-বাবা, পরিজন থেকে দিনের পর দিন বিচ্ছিন্ন রাখা।

তাসলিমা ভুল বা অন্যায় কিছুতো বলে নাই যে তাকে নির্বাসন দিতে হবে। তাসলিমার বাবা মারা গেলেন একটি বারও মেয়েকে চোখের দেখা দেখতে পেলেন না, মায়ের অবস্থাও ভালো না। এটি অত্যন্ত অনৈতিক।

১৫. দেশের জাতীয় সমস্যাগুলোতে সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিবর্গের প্রতিবাদের কন্ঠস্বর সীমিত ও ক্ষীন থাকে, এর কারন কি?

এ কথাটা মোটেও ঠিক না তানবীরা। আমরা সমস্যাগুলো অনুভব করি এবং তার পাশেই থাকি। কিন্তু আমরা যখন এর একটা সমাধান করতে বা বলতে যাই, দেশের মানুষ সেটা নিতে চায় না। আমরা সাংস্কৃতিক ব্যাক্তি বিধায় তারা ভাবেন আমরা অতি আধুনিক। আমাদের সমাধানের ধরনটাও হয়তো “অতি আধুনিক” চোখেই তারা দেখে থাকেন। তারা অনুভব করেন না, একজন শিল্পী একই সাথে মা, স্ত্রী, মেয়ে সবই। তারাও বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে দিয়ে যান হয়তো অন্যদের থেকে একটু আলাদা ভাবে।

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ফাহমিদা।
তোমাকেও তানবীরা।

তানবীরা
১৪.১১.২০০৯

Wednesday 8 December 2010

একখানি ক্রিয়া পদ দিয়ে

আমাদের বাসায় একজন হাফ বিদেশিনী থাকেন। গায়ের রঙ, খাওয়া – দাওয়া সবই দেশি শুধু মুখ খুললে সমস্যা। তার বাবা মায়ের মাতৃভাষা বাংলা হলেও তার জন্য এটি দ্বিতীয় ভাষা। তিনি তার পছন্দের ভাষাতেই কর কর করতে চান কিন্তু মায়ের আবার বাংলা বাংলা বাতিক আছে। তাই বাসায় রফা হয়েছে, বাবার সাথে অন্য ভাষার চর্চা চললেও মায়ের সাথে শুধু বাংলা আর বাংলা। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার চর্চা করতে মা বদ্ধপরিকর। তিনিও কম যান না। একখানা ক্রিয়া পদ ব্যবহার করে তিনি সর্ব ধরনের বাংলা ভাষা ম্যানেজ করে ফেলছেন। তার সাথে থেকে থেকে তার মা, খালা, মামা সবার বাংলা বলার ধরন পালটে যাচ্ছে। নিজে থেকে ডাচকে বাংলায় ভাষান্তর দিয়ে তিনি আজব কিছু বাক্যও গঠন করেন। যেমনঃ স্কুলের বন্ধুর জন্মদিনে গিয়েছেন তিনি। ফিরে এসে বলছেন, মা এভির আম্মু আমাকে অনেক সুন্দর পেলো। কেউ কিছু দিলে, আন্টির জন্য এটা আমি পেতে পারলাম।

তবে বিশেষ সেই ক্রিয়াপদের কিছু নমুনা এখানে। মেঘ তুমি গোসল করেছো? না, তোমাকে আমাকে হেল্প করতে হলো। মেঘ তুমি বই পড়েছো? না তোমাকে লাইব্রেরী থেকে নতুন বই আনতে হলো। দুষ্টামী করলে পিট্টি পরলে, তিনি গম্ভীর মুখে আমাকে বলবেন, সেজন্য তোমাকে আমাকে মারতে হলো না। কি করছো মেঘ? আব্বুর জন্য আমাকে এখন দশটা অঙ্ক করতে হলো। মেঘ কি খাচ্ছো? আম্মির জন্য এখন আমাকে দুধ খেতে হলো। এই জামা পরেছো কেনো? আব্বুর জন্য এখন আমাকে শীতের জামা পরতে হলো। এখন কি করবে? এখন বই পড়তে হলো, আব্বুর জন্য এখন আমাকে টিভি দেখতে হলো না। কার সাথে কথা বলছো? আব্বুর জন্য এখন আমাকে ফোনে কথা বলতে হলো।

সব হলো দিয়ে শুরু আর হলো দিয়ে শেষ।

আর আছে তার যুগান্তকারী ভাব, কিছু না হতেই মুখ কালো করে বলবে আমার কিছু বালোওওওওও লাগে না।

কিছু কিছু সুমধুর প্রশ্নও আছে, ছোতবেলায় কেনো আমাকে ডিনে ডুইবার ডুদ খেটে হলো? সকালে মুখ ধুতে বললে সে সমানে কুলকুচা করে যায়। আমি বকা দিলেই বলবে তাহলে কেনো দুতোই মুখ হলো বাংলায়। আমি কিচু বুজতে পারি না। তখন আমাকে শুদ্ধ করে বলতে হয়, একবার মুখ ধোও আর একবার চেহারা ধোও।

এখানে কথায় কথায় লোকের প্রচুর “ওকে” শব্দটি ব্যবহার করেন। আমি “ওকে”র বিকল্প হিসেবে “ঠিক আছে” কথাটি বলি। তিনিও বলেন, “থিক” আছে আম্মি, থিক।

বাংলা ভাষার যা হচ্ছে তাতো হচ্ছেই কিন্তু বিদেশিনীর মুখে বাংলা শুনতে খুবই “সুইট” লাগে।

তানবীরা

০৮.১২.২০১০

Thursday 2 December 2010

অহনার অজানা যাত্রা (আট)

ভিন দেশে অচেনা পরিবেশে স্বল্প পরিচিত একটা ছেলের সাথে জীবন কাটানো অহনার জন্য সব সময় সোজা ছিলো না। একবার এখানের অনেক কিছু চিনেছি বুঝেছি ভেবে মানসিক যে শক্তি সে অর্জন করতো পর মুর্হূতেই অন্য একটা ঘটনায় সেটা উবে যেতো। আশা নিরাশার দোলায় সে দুলতো সারাবেলা। ছোটখাটো অনেক ঘটনা, যেগুলো বিশ্লেষন করলে কোন যুক্তিতেই হয়তো গুরুতর নয় কিন্তু সেগুলোও সে সময় মনে প্রচন্ড প্রভাব ফেলতে লাগলো। যার কারনে অনেক সময় আপাতঃ সামান্য ব্যাপারেও অহনা অনেক অস্বাভাবিক আর তার স্বভাবের চেয়ে অনেক বেশি রুক্ষ আচরন করে বসতো। একবার অহনা বাসে করে স্কুলে যাচ্ছিলো। বাসে খুব আনমনা ছিলো সে। বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে নিজের মনে আকাশ পাতাল সব ভেবে যাচ্ছিলো। যখন লক্ষ্য করলো তখন দেখলো বাস এক অজানা জায়গা দিয়ে যাচ্ছে। ভয় পেয়ে অহনা পরের স্টপেজে নেমে, রাস্তার পাশের ফোন বুথ থেকে প্রায় কাঁদতে কাঁদতে অর্নকে ফোন করে বললো, “আমি হারিয়ে গিয়েছি, আমায় নিয়ে যাও।“ অফিসে হঠাৎ অহনার এধরনের ফোন পেয়ে হতবিহ্ববল অর্ন ওকে বার বার জিজ্ঞেস করছিলো, কোথায় তুমি এখন, কোথায়? কোথায় তা কী সে জানে? জানলে আর হারাবে কেনো? অহনা কাঁদতে কাঁদতে বললো, আমি জানি না আমি কোথায় এখন, তুমি এসে আমাকে নিয়ে যাও। এর মধ্যে পয়সা শেষ ফোন কেটে গেলো।

ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে শীতের সেই প্রায় অন্ধকার দিনে নির্জন সেই রাস্তায় অহনা দাঁড়িয়ে অনেকক্ষন একা একা কাঁদলো। কেউ নেই তার পাশে। স্ক্যান্ডেনেভিয়ার এই দেশগুলোতে কাজ ছাড়া সাধারণতঃ কেউ বাড়ির বাইরে বের হয় না। বাংলাদেশে যদি বাসস্ট্যান্ডে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদতো নিশ্চয় তাহলে অন্ততঃ দেখার জন্য হলেও দশটা লোক দাঁড়িয়ে পরতো। এখন বিধি বাম আর এখানে বিধিই নেইতো আর তার ডান বাম। একটু পর যখন আর একটা বাস উলটো দিক থেকে ফিরছিল তখন অহনা বাস কাউন্টারে গিয়ে সেই বাসে উঠে পরলো। কার আশায় আর কতোক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবে। আধ ঘন্টা পর পর একখানা বাস যায়। এবার বেশ বড় বড় চোখ করে বাইরে তাকিয়ে অহনা হারিয়ে যাওয়ার রহস্যটা আবিস্কার করার চেষ্টা করতে লাগলো। দেখলো তার অসাবধানতায় বাসটা স্কুল ছাড়িয়ে বেশ অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলো এবং জায়গাটা অপরিচিত বলে সে হারাবে কেনো এই লজিক্যাল চিন্তার বদলে অনেক বেশি ভয় পেয়েছিলো। ততোটা ভয় পাওয়ার আসলে কিছু হয়তো ছিলো না। অচেনা দেশ আর নতুন পরিবেশ অকারনেই ভয় খাইয়ে দেয়। এখন আর কি করবে, দেরীতেই স্কুলে ঢুকে, বাকি ক্লাশ করে বাড়িতে এলো সে। এসে দেখলো এন্সারিং মেশিনে বেশ কটি ম্যসেজ জমে আছে। বাটন টিপতেই শুনলো, অর্নের গলা। সে বাড়ি ফিরেছে কীনা তা নিয়ে অর্নের বেশ উদ্বিগ্ন গলা। বাড়ি ফিরেই যেনো ফোন করে জানায় বেশ কবার অর্ন তাকে সে তাগাদা দিয়ে রেখেছে।

ভিন্ন একটা পরিস্থিতি থেকে একা ফিরে এসে ফোনের ম্যাসেজ শুনে অহনার মাথায় রাগ চড়ে গেলো। সে অর্নকে কিছুতেই ফোন করে জানাবে না ঠিক করলো। একটু পরেই আবার ফোন বাজলো। মনে হলো সে বাড়ি ফিরেছে কিনা এটা চেক করার জন্য হয়তো অর্ন ফোন করেছে। তাই সে সারাদিন ফোন ধরবে না এটাও ঠিক করে ফেললো। অহনা এতো কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে পারলে অর্নও যাক কিছু টেনশানের মধ্যে দিয়ে। আর টেনশান না ছাই, সে এতো কাঁদলো কাটলো, অর্ন কি তাকে সাহায্য করতে কিংবা নিতে এলো। এতোক্ষন অহনার মধ্যে যতো ধরনের যুক্তি আর চিন্তা কাজ করছিলো না কেনো, মেশিনে অর্নের গলা পেয়ে সে যুক্তি চিন্তা সব অন্য স্রোতে বইতে শুরু করে দিলো। এতোবড়ো একটা বিপদে পরল সে কিন্তু অর্ন একটু এগিয়েও এলো না? এই ছেলের সাথে তাকে থাকতে হবে? কিছুই না করে তার জন্য, অফিসে বসে আরাম করে টেলিফোনের ফুটানী ঝাড়ছে। বিকেল পর্যন্ত অর্ন ফোন করে করে ক্লান্ত হলো, ম্যসেজের পর ম্যসেজ রাখলো কিন্তু অহনা গোঁজ হয়েই রইলো। সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরে অর্ন রেগে গেলো অহনার এই গোয়ার্তুমীর কারনে। তারপরো সে যতোই ব্যাখা করতে লাগলো, হারিয়ে গিয়েছি বলে ফোন রেখে দিলে, সে তাকে কোথায় খুঁজতে যাবে, কিভাবে? অর্ন জানে স্কুল কোথায় কিন্তু বাস রুট সে জানে না। সে জানে ড্রাইভ রুট, দুটো আলাদা। এতো বড়ো শহরের কোন পাশে খুঁজতে বের হবে তার একটা সামান্য ধারনাতো লাগবে নাকি? সারাদিন এতো টেনশান ক্রিয়েট না করে, অর্নকে তার জানানো উচিত ছি্লো সে ঠিকঠাক বাড়ি পৌঁছেছে। অফিসেতো অর্ন খেলতে যায় না, তাকে কুল মাইন্ডে কাজ করতে হয়। একেতো অর্ন কোন সাহায্য করেনি তার ওপর এসে আবার শুরু করেছে রাগারাগি!!!

প্রথমে অহনার হারিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে নীল হওয়ার ধকল, তারপর কোথাও কেউ নেই তাকে সাহায্য করার সেই মানসিক কষ্ট, আর এখন এই রাগারাগি তাকে বিধ্বস্ত করে ফেললো। কার দোষ আর কার না সেটা চিন্তা করার ক্ষমতাও উধাও হলো। সে আশপাশ ভুলে চিৎকার করে মা মা বলে কাঁদতে শুরু করে দিলো। অর্নও যেহেতু অনেক রেগে ছিলো সেও অহনাকে কিছু বলতে এলো না। কাঁদলে কাঁদো টাইপ ভাব। চিৎকার করে কান্নাকাটি করে কিছুক্ষন পর সে নিজে নিজে কিছুটা শান্ত হলো বটে কিন্তু এখানে আমার কেউ নেই। আমি একা, একান্তই একা এই ভাবনার একটা নিষ্ঠুর ছাপ তার মনের মধ্যে পার্মানেন্ট হয়ে গেলো। যা মানসিকভাবে অহনাকে অনেক দুর্বল করে ফেললো। একেইতো বাংলাদেশি সমাজে তার তেমন ঠাঁই নেই তারওপরে হারিয়ে গেলে খুঁজে নিয়ে আসারও কেউ নেই। রান্নাবান্না পুড়ে গেলে নষ্ট হয়ে গেলে অর্নের সোজা হিসেব ফেলে দাও। নতুন করে রাঁধো কিংবা কিনে খেয়ে নিবো এই হলো অর্নের সাহায্য। রান্নাটা ঠিক করে কি করে করতে হবে সেটা বলে দেয়ার মতো কেউ নেই। সংসারের টুকিটাকি ছোটখাটো কোন সমস্যায় আটকে গেলে নির্ভেজাল উপদেশ দিয়ে সাহায্য করবেন তেমন কেউ নেই তার পাশে। নতুন জীবনে তথা এই পুরো পৃথিবীতে সে নিজেকে প্রচন্ড একা মনে করতে লাগলো। আস্তে আস্তে বিষন্নতা গ্রাস করলো। বিষন্নতা মন থেকে শরীরেও প্রবেশ করতে লাগলো।

অহনার প্রায়ই জ্বর হতে লাগলো। ঠিক জ্বর নয় কিন্তু জ্বর জ্বর অনুভূতি, দুর্বল লাগা, ক্ষিধে না থাকা ইত্যাদি। তার গলা থেকে উচ্ছাস, প্রান ঝরে গেলো। টেলিফোনে তার গলার নিষ্প্রান স্বর তার বাবা মাকে দিন দিন উদ্বিগ্ন করতে লাগলো। ডাক্তার বিভিন্ন রকম পরীক্ষা আর ঔষধ দিয়ে নিশ্চিন্ত করলেন এই রোগ আসলে অহনার দেহের নয় মনের। সে প্রচন্ড হোম সিকনেসে ভুগছে। সে সুস্থ না হলে তাকে বিষন্নতার ঔষধ দেয়া হবে। এভাবে বেশ কয়েক মাস চললো। আবেগী অহনার মনে আবেগ আসতে সময় নেয় না কিন্তু যেতে অনেক সময় নেয়। কিন্তু তারপরো এক সময় সংসারের নানান কাজে, চাপে, উৎসবে অহনা মনের গ্লানি ভুলে আবার সামনের দিকে তাকাতে শুরু করলো। সময় হলো মহাষৌধ যা তার নিয়মে অনেক কিছুকে ম্লান করে দেয়। আপাতত ভাবি ভুলিয়ে দেয় কিংবা কষ্ট কমিয়ে দেয়। আসলে হয়তো তা নয়। কষ্ট আগেরটাই থাকে শুধু সহ্য শক্তি বেড়ে যায়। কিছু কিছু ধাক্কা মানুষকে অনেক সময় কিছুটা শক্ত করে তুলে। আরো অনেকেই এই পৃথিবীতে একা বেঁচে আছেন, বেশ লড়াই করে, শক্তভাবে সুন্দর ভাবে বেঁচে আছেন, আমাকেও থাকতে হবে এ কথাটা মনে মনে অনেকভাবে আওরে নিজেকে শক্তি দিতে চাইতো সে। কখনো কখনো তাতে কিছুটা শক্তি মনে সঞ্চয় হতোও বটে। কিন্তু ফ্ল্যাটের জানালা দিয়ে সরাসরি তারাহীন সেই নিকষ কালো আকাশের দিকে তাকালে বুক ফেঁটে একটা আর্তনাদ বেড়িয়ে আসতো, সব শক্তি উবে যেতো শুধু মনে হতো “একা আমি এতো দূরে, আমার নিজের পৃথিবী ছেড়ে।“

তানবীরা
০৩.১২.২০১০।


Wednesday 10 November 2010

জীবন যেখানে যেমন

আফা মালা নিবেন মালা? একটা মালা লন না আফা মাত্র দুই টেকা, ট্র্যাফিক সিগন্যালে গাড়ী থামতেই কচি গলার কাতর অনুরোধ। প্রখর রৌদ্রের প্রচন্ড খরতাপ উপেক্ষা করে হাতে অর্ধনির্মিলিত ফুলের মালা নিয়ে গাড়ীগুলোর কাছে দৌড়ে আসে আমেনা। নোংরা, ছেড়া জামা গায়ে, পিচগলা এই খরতাপে খালি পায়ে প্রত্যেক সিগনালে গাড়ী থামা মাত্র ঝাপিয়ে পড়ে মালা নেয়ার আবেদন নিয়ে জীবন সংগ্রামের এই কঠিন যুদ্ধে। অপুষ্টির জন্য স্বাস্থ্য দেখে বয়সের সঠিক আন্দাজ না পাওয়া গেলেও আমেনার, অনুমান বয়স সাত/ আট হবে তার। শুকনো লিকলিকে হাতে মালা বাড়িয়ে দেয় গাড়ীর খোলা জানালা দিয়ে তার সাথে থাকে কাতর আকুতি। কেউ বা কখনও মালা নেয়, কখনও কখনও এমনিতেই কেউ দু-চার টাকা দেয় তাকে। সারাদিনে এভাবেই পঞ্চাশ-ষাট টাকা রোজগার হয় তার। কখনওবা একটু বেশী কম। এই তার জন্য অনেক, মাকে দিবে সে এ টাকা, মায়ের সাহায্য হবে। মা খাবারের ব্যবস্থা করবেন তাদের জন্য হয়তো এ টাকা দিয়ে, রোজকার বাজার খরচ তাদের এটাকা। কাকডাকা ভোর হতেই ফুলের দোকানের সামনে থেকে দোকানীদের ফেলে দেয়া পচা ফুল থেকে একটু ভালো ফুলগুলো কুড়ানো দিয়ে জীবন শুরু হয় তার, খুব ভোরে না গেলে আবার ফুল পাবে না, সহযোদ্ধারা নিয়ে যাবে ফুল। ফুল কুড়ানো শেষ হলে শুরু হয় দ্রুত মালা গাথা। তারপর মায়ের রেখে যাওয়া পান্তা কিংবা মুড়ি খেয়ে বেড়িয়ে পড়ে সারাদিনের জন্য। সিগনালে সিগনালে দৌড়াদৌড়ির এক ফাকেই আবার ঘরে ফিরে খেয়ে নেয় দুপুরের খাবার। তারপর আবার রাস্তায়। এই রাস্তার ছোটাছুটির মাঝেই অনেকের সাথে আমেনার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে, অন্য এক জীবন তৈরী হয়ে গেছে রাস্তায় তার। মালা বিক্রি নিয়ে এমনিতে তাদের মাঝে রেষারেষি থাকলেও সিগন্যাল শেষ হলেই আবার তারা বন্ধু। বন্ধুরা এক সাথে সুখ দুখের গল্প করে, ফাকে ফাকে রাস্তার পাশে খেলাও করে। কোথাও গরীব খাওয়ানো হবে সন্ধান পেলে সবাই সবাইকে খবর দেয় আর একসাথে সকলে খেতে যায়। বন্ধুদের কাছ থেকে সিনেমার গান শোনে আর শুনে শুনে শিখেও নেয় মাঝে মাঝে। রাস্তায় বন্ধুদের সাথে তাল দিয়ে দিয়ে সেই গান গেয়ে গেয়ে হেসে হেসে গড়িয়ে পড়ে আমেনা, গান গাইতে তার বড় ভালো লাগে। ট্যাকা নাই, ট্যাকা থাকলে গানের বাদ্য কিনে অনেক গান গাইতো সে। গানের বাদ্য কিনতে কতো ট্যাকা লাগে তার আন্দাজও আমেনার নাই কিন্তু অনেক ট্যাকা লাগে সে ধারণা সে করতে পারে। কিন্তু মনের সাধ সে এই রাস্তায় গান গেয়ে কিংবা একা কোথাও ফাক পেলে গলা ছেড়ে গেয়ে মিটিয়ে নেয়, এই তার আনন্দ। মাঝে মাঝে এরই ফাকে দেখা যায় মা ডাকে তাকে তখন সে মায়ের কাজেও সাহায্য করে কিংবা ছোট বোনটাকে দেখে রাখে। সেই অনেক রাতে যখন গাড়ীর আনাগোনা কমে যায়, বেশীরভাগ লোকেরই যখন বাড়ী ফেরা শেষ তখন কর্মব্যস্ত দিন শেষে ছুটি আমেনারও, ফিরে যায় সারাদিনের পারিশ্রমিক নিয়ে সদর্পে মায়ের কাছে।

সখিনা, সখিনা বারান্দার গ্রীল ধরে আনমনে দাড়িয়ে থাকা সখিনার ভাবনার তার ছিড়ে যায় বিবিসাহেবের চিৎকারে। আজ কয়মাস হলো সখিনার খালা সখিনাকে এ বাড়ীতে এনে দিয়েছে এ বাড়ির ছোট বাচ্চাটাকে দেখাশোনা আর বাড়ির ছোটখাট ফাই ফরমাস খাটার জন্য। সাত / আট বছরের ছোট সখিনা এর আগেও এক বাসায় বাচ্চা রাখার কাজ করেছে। লিকলিকে রোগা পাতলা দেখতে হলে কি হবে? কাজে সে দারুন ভালো, বিবিসাহেবের ডাকের সাথে সাথে উড়ন্ত ঘূর্নি হয়ে সে উড়ে যায় তার কাছে, তাইতো বিবিসাহেবের ছোটমেয়ে খুব পছন্দ। বড়দেরতো নড়চড়তে সময় লাগে, ডাকের সাথে সাথে পাওয়া যায় না, বিবিসাহেবের সখেদ উক্তি। সখিনার কাজ করতে খারাপ লাগে না, বাচ্চার সাথে খেলা করার সময় বাচ্চার খেলনা দিয়ে সে নিজেও একটু খেলতে পারে, সাথে টিভিতে মজার মজার কার্টুন দেখে, পেট পুড়ে খাবার পায়, ভালো জামা-কাপড়, ফিতে-ক্লিপসহ নানা শৌখিন জিনিস পায় যা সে নিজের সংসারে কল্পনাও করতে পারে না। শুধু বাড়িতে রেখে আসা তার ছোট ভাইটার কথা যখন মনে পড়ে তখন বড্ড পেট পুড়তে থাকে। মা যখন বাড়ির বাইরে কাজে থাকত তখন সখিনার কাছেইতো থাকতো তার ছোট ভাইটা। মা না হয়েও মায়ের ভালোবাসায় আর যত্নে বড় করছিল ছোট ভাইকে সখিনা। কিন্তু মা বাবার দুজনের কাজের পরও পেট পুড়ে খেতে পারে না তাদের পুরো পরিবার, তাই সখিনার কাজে আসা। মাঝে মাঝে যখন সখিনার ফেলে আসা নীল আকাশ আর দিগন্ত জোড়া সবুজ মাঠের জন্য ভীষন মন কেমন করতে থাকে, এই বারান্দার গ্রীল ধরেই দাড়িয়ে আকাশ দেখে সে আর মনে মনে ফেলে আসা কাশবনে হারিয়ে যায়। কিন্তু সে ফুরসতও খুব কমই হয় সখিনার। খুব ভোরে উঠে ঘর ঝাট দেয়া দিয়ে দিন শুরু হয় সখিনার আর রাতে সবার খাওয়া শেষ হলে বাসন-কোসন মেজে ধুয়ে রেখে তবে ছুটি। সারাদিনে কতবার তাকে উপর নীচ দৌড়াদৌড়ি করে দোকানে যেতে হয়, ছাদে যেতে হয় কাপড় শুকোনোর জন্য তার কি কোন ইয়ত্তা আছে? দিনের শেষে পা যেনো আর চলে না সখিনার। তবুও এর মাঝেই আনন্দ খুজে নেয় সখিনার মন, ছাদে গেলে অন্য বাসার মেয়েদের সাথে দেখা হয়, গল্প হয়, মজার কথা নিয়ে হাসাহাসি হয়। বাসায় বাবুটাকে নিয়ে খেলে সে, গল্প শোনায় তাকে। ভাইয়ের কথা যখন অনেক বেশী মনে পড়ে তখন এই বাবুকেই অনেক বেশী আকড়ে ধড়ে অনেক আদর করে সখিনা। কিন্তু এ বাড়ির বড়বাবুটা যখন পুতুলের মতো কাপড় চোপড় পড়ে স্কুল যায় আসে, রঙ্গিন রঙ্গিন ছবি আকা বই নাড়ে চাড়ে, সুর করে রাইমস পড়ে তখন বুকের ভিতরটা তিরতির করতে থাকে সখিনার। কিন্তু সখিনাকে যে মাকে টাকা পাঠাতে হবে মাসের শেষে, পড়াশোনার বিলাসিতার কথা ভাবা কি তাকে সাজে? তাই যখন বড়বাবুর ঘর সে পরিস্কার করে, গোছায় তখন অনেক ভালোবাসা নিয়ে বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখে।

খুব সকালে খাবারের পুটলি বেধে নিয়ে মায়ের সাথে কাজে রওয়ানা হয় ছোট রহিমা। মা যোগালী দেয়, ইট টানে, পাথর ভাঙ্গে। মায়ের সাথে রহিমাও তাই করে তবে রহিমা ছোট বলে একসাথে অনেক ইট টানতে বা পাথর ভাংতে পারে না তাই রহিমার বেতন কম। কিন্তু রহিমাকে কাজ করতে হয় খুব মনোযোগ দিয়ে আর দ্রুত নইলে সর্দার (যে সামনে দাড়িয়ে কাজের তদারকী করে) খুব বাজে গালাগাল দেয় মাঝে মাঝে চড় - চাপড়ও দেয়। আট / নয় বছরের রোগা রহিমার কাজ করতে করতে দিনের শেষের দিকে হাত-পা ব্যাথা করতে থাকে, মাঝে মাঝে শরীর আর চলতে চায় না, কাতরাতে থাকে সে। রাতে শোয়ার পর অনেক সময় রহিমার মা রহিমার হাতে পায়ে তেল গরম করে মালিশ করে দেয়, রহিমার তখন খুব আরাম লাগতে থাকে। পয়সা বেশী পায় বলে যোগালী কাজ করে রহিমা আর তার মা কিন্তু এ কাজে এতো খাটুনী যে মাঝে মাঝে গায়ের ব্যথায় অসহ্য কোকাতে হয় তাদের মা বেটিকে। আধ ঘন্টা খাবারের ছুটি ছাড়াতো সারাদিনে কোন ছুটি নেই। দিন যেনো ফুরাতে চায় না রহিমার। সন্ধ্যে নামতে কেনো এতো দেরী হয় বুঝতে পারে না রহিমা, দুপুরের পর থেকেই সে আল্লাহর কাছে বলতে থাকে দ্রুত সন্ধ্যে করে দেয়ার জন্য যাতে বাড়ি ফিরতে পারে। রহিমা যখন মায়ের সাথে সকালে কাজে বের হয় তখন ওর বয়সী অনেক বাচ্চারাই তাদের বাবা মায়ের হাত ধরে নানারকম বায়না করতে করতে নাচতে নাচতে প্রজাপতির মতো স্কুলে যায় আর সেদিক তৃষিত নয়নে তাকিয়ে থাকে রহিমা। কিন্তু মায়ের তাড়া খেয়ে আবার দ্রুত পথ চলতে হয় রহিমার, সময়মতো কাজে না পৌছালে সর্দারের হাতে নাকাল হওয়াতো আছেই সাথে আবার পয়সা কাটা। শরীরটাকে দ্রুত তাড়িয়ে নিয়ে গেলেও মন তার উড়ে যায় সেসব প্রজাপতি বাচ্চাদের সাথে অন্যকোন ভুবনে, যে ভুবনে তার প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কল্পনা করতে চায় রহিমা কেমন হতো সে জীবন তার বই-খাতা হাতে নিয়ে? হয়তো একদিন সেও মাষ্টারনী হতে পারতো। রাস্তার শব্দ আর কাজের তাড়া তাকে সে কল্পনার পাখা অনেক দূর পর্যন্ত অবশ্য মেলতে দেয়া না, দ্রুতই ফিরিয়ে নিয়ে আসে তার নিজের জগতে। তবে কাজের জায়গায় ওর মতো আরো যে পিচ্চী যোগালী আছে তাদের সাথে দারুন ভাব আছে রহিমার। মাঝে মাঝেতো শুক্রবারে ওদের সাথে যেয়ে রহিমা বাংলা সিনেমাও দেখে আসে। তারপর সারা সপ্তাহ ধরে সব পিচ্চী যোগালীরা সেই সিনেমার নায়ক নায়িকা আর সিনেমার গান নিয়ে মজা করে হাসতে হাসতে এর তার গায়ে লুটিয়ে পড়ে, অবশ্যই সর্দার যেনো দেখতে না পায় সেভাবে। সারাদিনের কাজ শেষ করে বাড়ী ফিরে তারপর আবার সদাই এনে রান্না বসানো। এর ফাকেই গোসল আর অন্যান্য কাজ সেরে নেয়। মাকে রান্নায় সাহায্যও করে, খাওয়া দাওয়ার পাট চুকলে সব মায়ের সাথে গুছিয়ে সেই রাতে ছুটি হয় রহিমার।

সেই ভোর না হতেই নাকে মুখে রাতের বাসী দুটো গুজেই দুপুরের খাবারের বাক্স হাতে নিয়ে ছুটতে হয় শিল্পীর। সকাল আটটা থেকে ডিউটি শুরু হয় শিল্পীর বিকাল পাচটা পর্যন্ত কিন্তু বেশীর ভাগ দিনই ওভারটাইম করতে হয় বলে রাত আটটার আগে ছুটি পায় না। ওভারটাইম না করলে সুপারভাইজার রাগ করে, কাজ থেকে বের করে দেয়ার, বেতন কাটার হুমকি দেয় সারাক্ষন। এ লাইনে এখন এতো মেয়েদের ভীড় যে সুপারভাইজারকে চটাতে সাহস হয় না শিল্পীর। প্রতিদিনই প্রায় নতুন নতুন মুখ দেখা যায় ফ্যাক্টরীর গেটের কাছে, কাজের সন্ধানে গ্রাম থেকে চলে এসেছে। চাকরী চলে গেলে খাবে কি, সংসার চলবে কেমন করে তাদের? গার্মেন্টসে হাতের কাজ করে এখন শিল্পী, বড় হলে মেশিনে কাজ পাবে বলেছে সুপারভাইজার। এখন পিস হিসেবে টাকা দেয়, সারাদিন যে কটা কাপড় সেলাই করতে পারে তার উপরই তার বেতন নির্ভর করে। রোগা অপুষ্ট হাত নিয়ে তাই শিল্পী চেষ্টা করে যত দ্রুত সম্ভব যত বেশী কটা কাপড়ে বোতাম লাগাতে পারে। সাত / আট বছরের রোগাভোগা শিল্পীর সারাক্ষন কাপড় আর সুচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় বলে সন্ধ্যা না নামতেই ঘাড় আর দুচোখ ব্যাথায় টনটন করতে থাকে আর চোখ জূড়ে রাজ্যের ঘুম আস্তে চায়। কিন্তু ঘুম আসতে চাইলেইতো সুযোগ নেই, সারাদিন গার্মেন্টসের কাজ শেষ করে বাড়ী ফেরার পথে বাজার নিয়ে যেয়ে বড় বোনের সাথে রান্না বসায় শিল্পী, তারপর খেয়ে দেয়ে শুতে শুতে কখনও রাত এগারোটা আবার কখনও বারোটা। শিল্পীর বড়বোন মেশিনে কাজ করে, অনেক টাকা বেতন পায় তা দিয়ে তাদের ঘর ভাড়াটা হয়ে যায়। ফ্যাক্টরীতে কাজের ফাকে ফাকে শিল্পী অফিসে বসা আপা ম্যাডামদের মাঝে সাঝে যখন দেখে তখন ওর চোখ জুড়িয়ে যায়। মনে প্রশ্ন জাগে কি করে তারা এতো সুন্দর করে শাড়ী পড়ে, বসে, কথা বলে, চা খায়? শিল্পী জানে তারা অনেক পড়াশোনা করেছে, সাথে সাথে তার ছোট্ট মনে প্রশ্ন জাগে আহা আমি কি পারতাম না অনেক পড়তে? স্কুলে যেতেতো আমারও ইচ্ছা করে, আমারও ইচ্ছা করে এমন সুন্দর অফিস রুমে বসে কাজ করতে, আমারো ইচ্ছে করে- - - - এমনি আরো অনেক না বলা ইচ্ছেই শিল্পীর বুকের ভিতরে রিনরিন করে। কিন্তু শিল্পীর বাস্তব চেতনা জানে তাকে কাজ করে যেতে হবে তাদের পুরো পরিবারকে খেয়ে বেচে থাকতে হবে, এটাই শিল্পীর জীবনের চরম সত্য এখন। তবে এর ফাকেই মাঝে মাঝে শিল্পী একটু নিজেদের বস্তির মধ্যে পাড়া বেরিয়ে নেয়, সাথীদের সাথে গল্প গুজব করে, খেলার সময়তো আর হয় না তার, সারাটা দিনতো তার ফ্যাক্টরীতেই কেটে যায়। তবে গার্মেন্টসেও বন্ধু আছে শিল্পীর অনেক। অনেক সময় বেখেয়ালে হাতে সুই ফুটে গেলে কিংবা হাত কেটে গেলে তারা সুপারভাইজারের চোখ বাচিয়ে তাকে ডেটল লাগিয়ে দেয়, শরীর খারাপ লাগলে একটু বিশ্রাম নেয়ার ফাক করে দেয়। সারাদিনের একটানা কাজের ফাকে ফাকে তারাও গল্প করে, হাসে, মজা করে। মাঝে মাঝে শিল্পী ওদের সাথে শুক্রবারে বেরিয়ে সিনেমা দেখে আসে, শখের কেনাকাটা করে, আইসক্রীম খায়।

ঘুমের মধ্যেও যেনো আজকাল গানের শব্দ পায় রেনু, ঘুমোলেও আজকাল নাচের মাষ্টারমশায়কে স্বপ্নে দেখে সে। মাস্টারমশায় যেনো এক দুই তিন বলে নাচের প্র্যাকটিস করাচ্ছেন সব বাচ্চাদেরকে একসাথে, আর তারা সবাই ভীত মন নিয়ে প্র্যাকটিস করে যাচ্ছে। একটু ভুল হলেই গালাগালির সাথে আছে মার আর তার চেয়েও বড় ভয় হলো কাজ থেকে বের করে দেয়া। আর কাজ না থাকলে তারা খাবে কি? এমনিতেই তার স্বাস্থ্য খারাপ দেখে কাজ দিতে চায় না তাকে বেশী কেউ। সিনেমায়তো আর তার মতো রোগা পটকা চেহারার বাচ্চার তেমন দরকার হয় না, দরকার থাকে সুন্দর সুন্দর গোলগাল চেহারার বাচ্চাদের। কিন্তু নাদুস নুদুস চেহারা কোথায় পাবে রেনু? বন্যায় গ্রামে সব ভেসে যাওয়ার পর মা-ভাইয়ের হাত ধরে শহরের এই বস্তিতে এসে উঠেছে তাদের পুরো পরিবার। সবাই কাজ খুজেছে পাগলের মতো। একদিন বস্তির একজনের কাছেই জানতে পারল সিনেমার শুটিং এর জন্য বাচ্চা ভাড়া নেয়া হয়, সিনেমায় নাচের জন্য, দাড়িয়ে থাকার জন্য, একসাথে অনেক বাচ্চার প্রয়োজন হয় আর যারা এফ। ডি। সি এর গেটে আগে থেকে দাড়িয়ে থেকে প্রোডাকশনের লোককে কমিশন দেয় তারা কাজ পায়, যেতে পারে ভিতরে। তো একদিন সেই হদিসমতো রেনুর মাও সাত / আট বছর বয়সী রেনুর হাত ধরে এসে দাড়ালেন এফ।ডি।সির গেটে। প্রথমদিকে কদিন দাড়িয়ে থেকেও কোন কাজ পায়নি রেনু, লোকজনের ডাকাডাকি আর ধাক্কাধাক্কির ফাকে কোথায় উড়ে যেতো রেনু আর তার মা। এখন আস্তে আস্তে রেনুও লোক চিনে গেছে তাই মোটামুটি রেনুও কাজ পায়। সুন্দর জামাকাপড় পরে নাচ করা বাচ্চাদের সিনেমার পর্দায় দেখলে কারো রেনুদের কাঠফাটা রোদে আর গরমে সারাক্ষন দাড়িয়ে থাকার, প্র্যাকটিসের কষ্টের কথা কল্পনাও হয়তো করতে পারবে না। কিন্তু এখানের কাজে কমিশন দিয়েও ভালো পয়সা হাতে থাকে তাছাড়া রেনু যখন জুনিয়র থেকে সিনিয়র হবে তখন আরো অনেক বেশী পয়সা পাবে সেদিকটাও ভাবে। আর এখানে কাজের সুবাদে অনেক বড় বড় নায়ক নায়িকাকেও কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছে সেটাও কি কম কথা, যাদেরকে একজনর দেখার জন্য গেটের বাইরে হরহামেশা ভীড় লেগেই থাকে। বড় বড় গাড়ি হাকিয়ে অনেক বড় বড় লোক আসেন ষ্টুডিওতে, অনেক সময় তাদের সাথে থাকে ফুটফুটে সব বাচ্চা। সেসব গোলগাল ফুটফুটে বাচ্চারাই সিনেমার মেইন রোল পায়। রেনুরও বড্ড ইচ্ছে করে ঐসব গোল গোল সাহেব বাচ্চাদের মতো ফটফটিয়ে ইংরেজীতে কথা বলতে, বাবা-মায়ের কাছে নানারকম বায়না করতে, সিনেমার মেইন রোল করতে। কিন্তু কি করে হবে সব, তারাতো পড়াশোনা জানে, রেনু জানে না। কিন্তু পড়াশোনা করতে রেনুরও বড় সাধ মনে, হবে কি সেই সাধ পূর্ণ কখনও? সারাদিন রেনুর এই কোলাহলেই কেটে যায়, তবে ওদের মধ্যে যাদের চেহারা ভালো তারা অনেক সময় দু বেলাই কাজ পায় সেদিক থেকে রেনুর কপাল মন্দ বললেই হয়, দুবেলা কাজ খুব কমই পায় সে। কিন্তু তাই বলে সন্ধ্যে নামলেই রেনুর ছুটি হলো এ কথা ভাবার কোন কারণ নেই, বাড়ি ফিরে মাকে ঘরের সমস্ত কাজে সাহায্য করে, সব গুছিয়ে সেই রাতের বেলায় তার ছুটি হয়।

জরিনা, জরিনা চা নিয়ে আয়তো দু-কাপ। নার্সদের চিৎকার করে ডাকার বিরাম নেই আট / নয় বছরের জরিনাকে। জরিনা এ ক্লিনিকের সব ডাক্তার-নার্সদের ফুট ফরমাশ খাটে আর মায়ের সাথে সাথে ক্লিনিকের সাফ-সাফাই করে। মাঝে মাঝে রুগীদেরও ফরমাস খেটে দেয় সে আর তার বিনিময়ে পায় বখসীস। মায়ের আলাদা বখসীস আর তার আলাদা। জরিনার মা এ ক্লিনিকের আয়া। কাজে আসার সময় জরিনার মা জরিনাকে কোথায় রেখে আসবেন? তাই ছোটবেলা থেকেই সাথে নিয়ে আসতেন জরিনাকে এখানে। সেই থেকে এখন আস্তে আস্তে জরিনাও এই ক্লিনিকের এক অবিচ্ছেদ্য কর্মী হয়ে গেছে। সবার মুখে মুখে এখন সারাক্ষন তার নাম ঘুরে। সারাদিনে দম ফেলানোর সুযোগ নেই জরিনার। পাশের দোকান থেকে রোগীদের প্রয়োজনীয় জিনিস এনে দাও, ডাক্তারদেরকে দফায় দফায় চা এনে দাও আবার মায়ের সাথে ক্লিনিক মুছতে হাত দাও। মাঝে মাঝে এই দৌড়াদৌড়িতে মাথা ঘুরতে থাকে তার মনে হয় এখুনি পড়ে যাবে। এতো দৌড়াদৌড়ির জন্যই স্বাস্থ্যটা খারাপ জরিনার। না কোন অসুখ নেই তার কিন্তু পাটকাঠি চেহারা। তার বয়সী বাচ্চা যারা ক্লিনিকে আসে তারা কতোই না ঝরঝরে স্বাস্থ্যের থাকে, আর সে হাড় জিরজিরে। তবে সবাই ভালোবাসে জরিনাকে, মাঝে মাঝেই হাতে দু / চার টাকা দেয় চকোলেট খাবার জন্য, কোন কোন ডাক্তার আঙ্কেল-আন্টি তাকে তাদের বাচ্চাদের পুরোন কাপড় এনে দেন বাড়ি থেকে আবার কেউ কেউ ঈদে নতুন জামা কেনার পয়সাও দেন। এই রোজ দিনের বিশ / তিরিশ টাকা একসাথে করে মাসের শেষে দেখা যায় অনেক টাকা হয়ে গেছে তার, এটাকা সে মায়ের কাছে দেয়। মা খরচ করেন কিংবা কিছুটা হয়তো জমান। না বাধা কোন বেতন নেই তার। ডাক্তার আঙ্কেল আন্টিদেরকে দেখতে কিই সুন্দর যে লাগে জরিনার। গলায় মালার মতো স্টেথিসকোপ ঝুলিয়ে কি সুন্দর করেই না গটগট করে হেটে যান তারা। কি মিষ্টি করেই না তারা কথা বলেন রোগীদের সাথে। জরিনারও খুব সাধ হয় স্কুলে যেতে অনেক পড়তে, তবেই না একদিন সে এমন করে সুন্দর গাড়ি থেকে নেমে এভাবে গলায় ষ্টেথিসকোপ ঝুলিয়ে রুগী দেখতে পারবে। মাকে কতোবার বলেও সে কথা, বায়না করে, ওমা আমিও স্কুলে যাব। মা ঝাঝিয়ে উঠেন বলেন খাওয়ার চিন্তা নেই তো স্কুল। বাস্তবকে অস্বীকার করতে পারে না, কি করবে জরিনা? তবে সে মাঝে মাঝে ক্লিনিকের দারোয়ান, ড্রাইভার, অন্য আয়াদের বাচ্চাদের সাথে খেলা করে, ক্লিনিকের সবার সাথে বসে টিভি দেখে। টিভি দেখতে জরিনার ভীষন ভালো লাগে। কি সুন্দর সুন্দর জামা কাপড় পড়া ছেলে মেয়েরা কি সুন্দর করে নাচে, গান গায়। ফাক পেলে জরিনাও একা একা আপন মনে সেসব গান গুনগুন করে।

সারাঙ্গা তার ছোট ছোট হাতে ফুট ম্যাসাজ করতে করতে ক্লান্ত চোখ মেলে বাইরের দিকে তাকায়, আকাশ দেখে বুঝে নিতে চায় সন্ধ্যা হতে আর কতো দেরী। সকাল নটা থেকে রাত নটা পর্যন্ত কাজ করে সারাঙ্গা এই বিউটি পার্লারে। ছোট সারাঙ্গা দু বছর ধরে কাজ করছে এই বিউটি পার্লারে। সারাঙ্গার গ্রামের এক মেয়ে বিউটি পার্লারে চাকরী করতো তার সাথে দশ বছরের সারাঙ্গাও ঢাকায় চলে এসেছিল জীবনের খোজে। গ্রামের মেয়েটি সারাঙ্গাকে তার সাথে কাজে নিয়ে নেয় মালিককে বলে কয়ে। প্রথমে ছিল কাজ শেখার পালা তখন সারাঙ্গা শুধু থাকা আর খাওয়ার পয়সা পেতো। আস্তে আস্তে কাজ শেখার পর থেকে সারাঙ্গা এখন বেতন পাচ্ছে আর তা থেকে নিজের খরচ বাচিয়ে সে বাবা মাকে মাসে মাসে টাকা পাঠাতে পারে। সারাদিন অবিশ্রান্ত খাটতে হয় অবশ্য সারাঙ্গাকে এজন্য। ম্যাসেজ করতে করতে এক এক সময় হাত আর চলতে চায় না তার কিন্তু কাজে কোন ফাকি দেয়ার অবকাশ নেই। কাজের সামান্য একটু হেরফের হলেই কাষ্টমাররা ডিরেক্ট নালিশ করেন মালিককে আর শুরু হয় মালিকে বকাঝকা, মাঝে মাঝে অনেকের বেতনও কেটে নেন মালিক। অথচ এক সময় কতো স্বপ্ন ছিল সারাঙ্গার, অনেক অনেক পড়াশোনা করবে, বাবা-মায়ের দুঃখ ঘুচাবে, নিজে বড় হবে, নিয়মিত স্কুলে যেতোও সারাঙ্গা সেজন্য। পড়াশোনাও করতো মন দিয়ে কিন্তু প্রয়োজন সারাঙ্গাকে সে সুযোগ দিল না। নিষ্ঠুর অভাব সারাঙ্গাকে তার আগেই তার স্বপ্নের পথ থেকে ছিড়ে এই কঠিন বাস্তবে নিয়ে এলো। সপ্তাহে সাত দিনের সাত দিনই কাজ করতে হয় সারাঙ্গাকে। তবে মাঝে সাঝে যখন পার্লার কম ব্যস্ত থাকে তখন একবেলা কিংবা বা দু/তিন ঘন্টার ছুটি নেয় সারাঙ্গা। তখন দু / তিন জন সহকর্মী মিলে একসাথে ঘুরতে বের হয়, ঝালমুড়ি খায়, এটা ওটা টুকটাক বাজার করে বাড়ির জন্য, যখন বাড়ি যাবে নিয়ে যাবে সাথে। সারাদিন কাজের পর বাসায় যেয়ে সারাঙ্গা যখন টিভি দেখে তখন সারাঙ্গার খুব ভালো লাগে। সারাদিনের মধ্যে এই টিভি দেখার সময়টুকুই সারাঙ্গা নিজের জীবনের সব দুঃখ ভুলে যেয়ে আনন্দে মেতে উঠতে পারে অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে।

বিউটির বাবা পুকুরে পুকুরে মাছ ধরে সেগুলো ঘরে ঘরে যেয়ে বিক্রি করে প্রায় সারা বছর। আর গ্রামে যখন শীতকালে নদী, পুকুর, খাল শুকিয়ে আসে সেখানের কাদা-পানিতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় যা হাতে ঘেটে ঘেটে ধরা যায়, বিউটি তখনও তার বাবার সাথে সাথে, সামনে পিছনে থেকে বাবাকে সাহায্য করে। বাবা মাছ ধরে দিলে ঝাপিতে পুড়ে রাখে, কিংবা ডেকচিতে পানির সাথে জিইয়ে রাখে। কখনও কখনও বাবার সাথে মাছ ধরতেও নেমে যায় কাদা পানিতে। রোগা লিকলিকে দশ বারো বছরের হাড় জিরজিরে বিউটি বাবার সাথে কাজ হয়ে গেলে মাকেও ঘরের কাজে, পানি আনা, খড়ি আনাতে সাহায্য করে। মাঝে মাঝে স্কুলেও যায় সে, স্কুলের খাতায়ও নাম আছে, স্কুলে গেলে চাল পাওয়া যায় তাই যাওয়া। পড়াশোনা করার সময় ও সুযোগ কম, কিন্তু চালটা পেলে বেশ উপকার হয় সংসারে, তাই মাসে দু-চার দিন স্কুলে যেতেই হয়। রোদে তাতানো, বৃষ্টিতে ভিজানো শরীর বিউটির, শ্রী বলতে কিছুই নেই। আর কাক ডাকা ভোর থেকে যে জীবন কাদা পানিতে আরম্ভ হয়, তার আর কিই বা শ্রী বাকি থাকে? কাদা মাখা নোংরা পানি ঘেটে ঘেটে হাতে পায়েও অনেক সময় ঘা এর মতো হয়ে থাকে। তবুও এই শরীর নিয়েই বিউটি আগামী দিনের সুন্দর স্বপ্ন দেখে। সে স্বপ্ন কেমন করে পূরন হবে তা বিউটি জানে না কিন্তু তবুও ওর কিশোরী মন একটি ছোট খড়ের ঘর, পেট ভরে খাওয়ার নিশ্চয়তার আশায় দিন গুনে। আর সেই স্বপ্নকে সফল করার জন্য তেজী টগবগে ঘোড়ার মতো দিনমান ছুটে চলে। মাঝে মাঝে আশে পাশের বাড়ির সমবয়সী মেয়েদের সাথে খেলা করে, বিভিন্ন পার্বনে মেলা হলে সেখানেও যায় বন্ধুদের সাথে, ছোট মাটির পুতুল কিনে এনে তাদের শাড়ি পড়ায়, সাজায় সাথে হয়তো আগামী দিনের কিছু স্বপ্নও আনমনে ভেসে যায় নিজের চোখে। আগামী একটি সুন্দর দিনের আকাংখাই হয়তো এই নিরানন্দময় কঠিন জীবনের বিউটিদের বাচিয়ে রাখে।

সুখী মধ্যবিত্তরা অল্প একটু সাংসারিক কাজ করলেই হাপিয়ে পড়ে, কাজের লোকের জন্য আশে পাশের চতুর্দিকে লোক লাগিয়ে খোজ করে, যতক্ষন লোক না পাওয়া যায় সংসারে চরম বিশৃংখলা সুদ্ধ, গৃহীনির মেজাজে অন্যদের বাড়ি টেকাই সাধারণত দায় হয়ে পড়ে। কাজের লোক থাকা সত্বেও রোজ দিনের এক ঘেয়েমি নিয়ম বদলানোর জন্য কিংবা নিয়মের ক্লান্িত কাটানোর জন্য ছুটি কাটানো, বেড়ানো থেকে আরম্ভ করে লোকে কতো কিনা করে। আর এই নিস্পাপ শিশুগুলি জীবন কি তা জানার আগেই যে কঠিন সংগ্রাম আরম্ভ করেছে তাদের বিশ্রাম কিংবা মুক্তি কোথায় হবে এবং কবে হবে? ক্লাশ এইট পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা হলেও কজন বাচ্চা মেয়ে স্কুল পর্যন্ত পৌছতে পারে সংসারের এই সীমাহীন প্রয়োজনকে পাশ কাটিয়ে? শুধু শিক্ষা বাধ্যতামূলক আর অবৈতনিক করাই হয়তো সমস্যার সমাধান নয়। প্রয়োজন অর্থনৈতিক অবকাঠামো পরিবর্তনের যা এই সমস্ত নিয়ম পালন করার পরিবেশ তৈরী করবে। ১৯৫৪ সালের ১৪ই ডিসেম্বর জেনারেল এ্যাসেম্বলী নির্ধারণ করেছিলেন প্রতি বছর বিশ্বে একটি দিন ‘আন্তর্জাতিক শিশু দিবস‘ হিসেবে উদযাপন করা হবে। সেদিন শিশুদের সাথে বিশেষ ধরনের খেলাধূলা, বিভিন্ন রকমের ব্যাপার, নতুন নতুন ধারণা নিয়ে কথা বলা হবে। যে সমস্ত খেলা ও বিনোদন শিশুরা সবচেয়ে বেশী উপভোগ করে তার বন্দোবস্তও করা হবে। বড়দের সাথে শিশুদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করা হবে। শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য নানারকম মঙ্গলকর ও আনন্দদায়ক প্রকল্পের ব্যবস্থা করা হবে। বিভিন্ন সময় শিশুদেরকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ ও আইন প্রনয়ন করা হয়েছে, এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ২০শে নভেম্বর ১৯৫৯ সালের ‘শিশুর অধিকার আইন‘ যা ১৯৮৯ সালে আরো পরিশোধিত ও পরিবর্ধিত ও বস্তুনিষ্ঠ আকারে আসে। কিন্তু আজো তা পৃথিবীর সব শিশুর জন্য আসেনি। আইন পারেনি সব শিশুর অধিকার আর মুখের হাসি রক্ষা করতে। ২৩শে এপ্রিল ২০০৭ আন্তর্জাতিক শিশু দিবসে বিশ্বর সব শিশুদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই, সাথে এই আশাও রাখি শিশু দিবসের আনন্দ সব শিশুরা সমানভাবে উপভোগ করার সুযোগ পাবে। এই আনন্দ শুধু উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তের ব্র্যাকেট কিংবা এন।জি।ও দের বিশেষ কার্যক্রম আর টেলিভিশনের তাৎক্ষনিক প্রদর্শনীতেই বন্দী হয়ে থাকবে না। অযত্নে জন্মানো কুড়িকেও ফুল হয়ে ফোটার সুযোগ করে দিবে।


তানবীরা তালুকদার
১২।০৫।০৬

এই লেখাটি ২০০৬ সালের, কোথাও কখনো প্রকাশ হয়নি। আজ সন্ধ্যায় জিটকে ছোটবোন বললো কাল ইউনিভার্সেল চিলড্রেন্স ডে উপলক্ষ্যে সে গুলশান এক নম্বর সিগন্যালে ফুল বিক্রি করতে যাবে। এক হাজার বাচ্চাকে গুলশান ওয়ান্ডার ল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। একদিনের জন্যে হলেও বাচ্চারা আনন্দ পাক, সবার জন্য শুভকামনা রইলো। অনেক খোঁজাখুজি করে হারিয়ে যাওয়া ভাবনাটা সবার সাথে ভাগ করলাম।

Friday 29 October 2010

মিলিনিয়াম দশকের ঢাকা-------- প্রবাসীনির চোখে

২০০০ সালে নতুন দশকের সাথে সূচনা হয় নতুন সহস্রাবব্দের। সারা পৃথিবী জুড়ে এনিয়ে হৈ চৈ শুরু হয়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। নিরানব্বই – দুই হাজারে বাংলাদেশের অনেক দোকান পাটের নাম হয় এই অনুসারে। ঢাকার নিউমার্কেটে চলে আসে “মিলিনিয়াম বিরানী হাউজ”। নামকরনের এই ব্যাপারটি বাংলাদেশে ইউনিক। চায়নীজ রেষ্টুরেন্টের নাম ‘ম্যাকডোনাল্ডস”, চুল কাটার দোকানের নাম “কাসাব্লাংকা হেয়ার কাটিং”, জিগাতলায় আছে “সুনামী রেষ্টুরেন্ট”। যেকোন জিনিস যেকারনেই আলোচিত তার দ্বারাই কিছু না কিছু দেশে নামাংকিত। বুশ আর সাদ্দামের যুদ্ধের কারনে সে সময়কার জন্মানো প্রচুর ছেলে শিশুর নাম “সাদ্দাম”। আর একটি জিনিস আমার বাংলাদেশের খুব মনে ধরে রাস্তার দুপাশে মনোরম সব বিলবোর্ড। এ জিনিসটি আমি খুব একটা বাইরে দেখিনি দক্ষিন এশিয়া বাদে। পশ্চিমে থাকে খুবই ছোট সাইজের সামান্য বিজ্ঞাপন, কিন্তু প্রকট রঙ ব্যবহার করে, পেল্লায় সাইজের এই বিলবোর্ড একান্তই দক্ষিন এশিয়ার গৌরব।

এই গৌরবজ্জল সহস্রাবব্দের সূচনা হয়েছে বাংলাদেশে খুবই কলঙ্কজনকভাবে। থার্টি ফার্ষ্ট নাইট উদযাপন করতে অনেক ছেলেদের পাশাপাশি কিছু মেয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বের হয়েছিল। সেখানে “বাঁধন” নামে এক তরুনীকে প্রকাশ্যে লান্থিত করা হয়। যার কারনে তার ব্যক্তিগত জীবন প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়, তার সেই সময়ের বাগদত্তা তাদের বাগদান ভেঙ্গে দেন। ২০১০ সালে অপরাধ প্রমানিত না হওয়ায় সেইদিনের সব অপরাধীকে আদালত মুক্তি দেন। সমন জারী করা সত্বেও একদিনও বাঁধন আদালতে আসেননি, শুনানীতে কিংব সাক্ষ্য গ্রহনে অংশগ্রহন করেননি। পৃথিবী জুড়ে যে সহস্রাবব্ধের সূচনা হয়েছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে, সেখানে বাঁধন নিজের ওপর হয়ে যাওয়া অন্যায়টুকুর প্রতিবাদ করার সাহস পাননি নিজ দেশে।

এই দশকে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে তার ডাবল হ্যাট্রিক অর্জন করে বিশ্বজোড়া অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন থাকে। মধ্যবিত্তের জীবন ধারায় প্রভূত পরিবর্তন ও উন্নতি দেখা যায়। প্রায় বাড়িতেই রঙীন টিভি, ডীপ ফ্রিজ, এসির মতো ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী সাধারন ঘটনায় পরিনত হয়। প্রায় সবার হাতে হাতেই মোবাইল। সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার মোবাইল – টিভি এগুলো তখন মধ্যবিত্ত নয় নিম্নবিত্তের হাতে পৌঁছে গেছে। প্রায় প্রতি মধ্যবিত্ত ঘরেই কম্পিউটার বর্তমান। এবং আধুনিক জেনারেশন ব্যাপকভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহারও করছেন। আগের মতো সিদ্ধ করে পানি ছেঁকে ঢালার পরিবর্তে বাড়িতে বাড়িতে ফিল্টার মেশিনের প্রচলন হয়। ঢাকায় বসুন্ধরা - শর্পাস ওয়ার্ল্ড এর মতো শপিং মল এসেছে মধ্যবিত্তের জীবনে। সারা গুলশান – ধানমন্ডি ভরে গেছে বাহারী ইংরেজী, বাংলা নামের আধুনিক ও অভিজাত রেষ্টুরেন্টে। বিশ্ববিখ্যাত ফার্ষ্ট ফুড চেইন কেন্টোকী ফ্রাইড চিকেন, পিজা হাট তাদের বাংলাদেশের প্রথম দোকান খুলেন গুলশানে। বুমারস এর মতো রেষ্টুরেন্ট ছাত্র ছাত্রীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। কিংস বেকারী ব্রাউন ব্রেড নিয়ে আসেন ঢাকার বাজারে। আগে মাছওয়ালা, মুরগীওয়ালা শুধু বিক্রি করেই চলে যেতেন। এখন তারাও বাড়তি সেবা প্রদানে মনোযোগী হয়েছেন। বিক্রির পর মাছ – মুরগী কেটে দিয়ে যান। সারা দেশ জুড়েই ফার্মের মুরগী খাওয়ার প্রচলন হয় দেশি মুরগীর পাশাপাশি।

এই দশকে আবারো জলপাই রঙধারীরা প্রায় দুবছর দেশ শাসন করেন। বিদ্যুৎ সমস্যা প্রকট আকার ধারন করে এই দশকে। বিদ্যুৎ সমস্যা, পানির সমস্যা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, অসহ্য যানজট নিয়ে চলেছে এই দশকের মধ্যবিত্তের জীবন। বিদ্যুৎ সমস্যার আপাত সমাধান বের করেন মধ্যবিত্তরা আইপিএসের মাধ্যমে। শনির আখড়ায় ২০০৬ সালে অতিষ্ঠ এলাকাবাসি তাদের জনপ্রতিনিধিকে ধাওয়া করেন এক পর্যায়ে। বাংলা ভাই নামের এক সন্ত্রাসীর উত্থান ঘটে এবং হাজার নাটকের মাধ্যমে তাকে সরকার গ্রেফতার দেখিয়ে এই নাটকের আই ওয়াশ সমাপ্তি ঘটান। একযোগে ৬৩টি জেলায় বোমা বিস্ফোরনের ঘটনাও এদশকেই ঘটে। ২১শে আগষ্ট ২০০৪ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ২০১০ সাল পর্যন্ত এই ঘটনার তদন্ত কাজ চলছিল। তবে এই দশকে বংগবন্ধু হত্যা মামলার আসামীদের সাজা হয় আর জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়। রমনা বটমূলে নতুন বছরের প্রথম প্রহরে সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা করে। বোমা বিস্ফোরন, বিল্ডিং ধ্বসে মৃত্যু, অগ্নিকান্ডে মৃত্যু, হত্যা সর্বোপরি অপমৃত্যুর হার এই দশকে সর্বকালের রেকর্ড ছাড়ায়। যারই অপমৃত্যু হোক না কেনো, যেকোন কারনে তার সুবিচার পাওয়া বাংলাদেশে অসম্ভব এটাও এই দশকেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।

আনিসুল হকের লেখা আর মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী এর পরিচালনায় ব্যাচেলর নামক ছবিটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয় মধ্যবিত্ত দর্শকদের কাছে। ব্যাচেলর সিনেমার ভাষারীতির দ্বারা তরুন সমাজ ব্যাপক প্রভাবিত হন। প্রমিত ভাষার পরিবর্তে উঠতি লেখকরাও ফারুকী ভাষা ব্যবহারে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। নগর জীবনে, স্কুল কলেজে, নাটকে, সিনেমায় এই ভাষাটির প্রচলন শুরু হয়। সুশীল সমাজে এই নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত মধ্যবিত্তের জীবনের কোথাও এই ভাষারীতিটি রয়ে যায়। তিশা, শ্রাবন্তী, তিন্নি, প্রভা, অপূর্ব, শাহেদ, হাসান মাসুদ, অপি করিম এরা এসময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রী। আনিসুল হকের লেখা ধারাবাহিক ৬৯, ৫১, দৈনিক তোলপাড় মধ্যবিত্তের কাছে ব্যাপক প্রশংসা পায়। সেই সময় নাটকেরও গ্রুপ তৈরী হয়। হুমায়ূন আহমদের গ্রুপ, সালাহউদ্দিন লাভলু গ্রুপ, আনিসুল হক গ্রুপ ইত্যাদি। প্রত্যেক গ্রুপের কিছু ফিক্সড অভিনেতা অভিনেত্রী ছিলেন। হুমায়ূন আহমেদ মানেই শাওন, সালাহউদ্দিন লাভলু মানেই তানিয়া আর ফারুকী মানেই তিশা। এ সময়ের আরো কিছু উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিক ছিল ৪২০, লাবন্যপ্রভা, রঙের মানুষ।

লেখালেখির জন্য ব্লগ মাধ্যমটিও ঢাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সামহোয়ারইন নামক বাংলা ব্লগটি প্রথম বাংলা ভাষাভাষীদের প্রতিষ্ঠিত ব্লগ। অনেক প্রতিষ্ঠিত লেখক সাংবাদিক প্রিন্ট মিডিয়ার পাশাপাশি অন্তর্জালেও লেখালেখি শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক, হাই ফাইভ, অর্কুট, টুইটার, গুগল বাজ এগুলোর বিশদ ব্যবহার ঢাকাবাসী শুরু করেন। মোবাইলের মাধ্যমে অন্তর্জাল ব্যবহার করাও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এসময়। মিলা, তিশমা, আনুশেহ, শাহরিয়ার জয়, অর্নব, বাপ্পা, পার্থ, হাবিব, বালাম, তপু, তাহসান এরা সেসময়ের জনপ্রিয় গায়ক গায়িকা। দেশি কাপড় ব্যবহার করে দেশে তৈরী পোশাক তখন তারকাদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। ফ্যাশন হাউজ রঙ, ড্রেসিড্যাল, ইনফিনিটি, স্মার্টেক্স, বাংলার মেলা, মায়াসীর, দর্জি, মান্ত্রা এরা নিজেদের ডিজাইনের স্বাতন্ত্র্যের কারনে মধ্যবিত্তের মন কাড়েন। মধ্যবিত্তকে ভারত থেকে বাংলাদেশমুখী করে তুলেন এই ফ্যাশন হাউজগুলো। অনে্কে বিয়ের উৎসবের জন্যেও দেশি ফ্যাশন হাউজের ওপর নির্ভর করতে লাগলেন। পাটিয়ালা সালোয়ার নামক অনেক কুচি দেয়া পাঞ্জাবী সালোয়ার ২০০৪ – ২০০৫ এর দিকে খুব জনপ্রিয় ছিল। আবার সেই সময় ওপরে কলার তোলা বান্টি বাবলী কামিজের ডিজাইনও হট কেক ছিল। যদিও বিভিন্ন সময় ভীর জারা থ্রীপিস, লাক্ষৌ চিকেনের কাজ করা থ্রীপিস, চুন্দরী থ্রীপিস, কটকী থ্রীপিস ঘুরে ঘুরে ফ্যাশনে ছিলো। এ সময়ে কিশোরী তরুনীদের কাছে জীন্স ফতুয়া বেশ জনপ্রিয় ছিল। আধুনিক ছেলেরা অলঙ্কার পরা শুরু করেন এ দশকে। হাতে নানা ধরনের ব্রেসলেট, গলায় মালা সহ অনেককেই দেখা যেতো। অনেক ছেলেই রঙীন পাঞ্জাবী ও ফতুয়া পরতেন।

গয়নায়ও আসে যুগান্তকারী পরিবর্তন। হাল ফ্যাশনের গয়নার পরিবর্তে আগের দিনের ভারী ভারী সেকেলে গয়নার ডিজাইন বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। রুপোর গয়নায় সোনার জল দিয়ে তাতে নানা রঙের ম্যাচিং পাথর বসিয়ে মেয়েরা পরতে লাগলো। সোনার বদলে রুপো হয়ে ওঠলো মধ্যবিত্তের অলংকার। বিয়ের সাজেও আগের মতো প্রচুর ফেস পেন্টিং বাদ গেলো। হাত ভর্তি করে কনুই পর্যন্ত মেহেদী দেয়া হতো বিয়ের কণেদের। অনেকে পায়েও দিতেন। কনেরা লালের পাশাপাশি অন্য রঙের কাপড়ের ব্যবহার শুরু করলেন বিয়েতে। অনেক সময়ই দেখা যেতো বর কনে রঙের সামঞ্জস্য করেই কাপড় পরেছেন। বরদের শেরোয়ানী, পাগড়ী প্রভৃতিতে মুম্বাইয়ের লেটেষ্ট মডেলের ছাপ দেখা যেতো। বিয়েতে আলাদা আলাদা কোনে ছেলে মেয়েকে আলাদা করে বসানোর পরিবর্তে, বরকনেকে পাশাপাশি চেয়ারে বসানোর রেওয়াজ শুরু হলো। গায়ে হলুদে গান নাচের প্রচলন হয় ব্যাপক ভাবে। মধ্যবিত্ত মেয়েরা প্রচন্ড ত্বক, রুপ সচেতন হয়ে ওঠে সে সময়। প্রায় প্রতি পাড়ায় মোড়ে বিউটি পার্লার দেখা যেতো এসময়টায়। অনেক মধ্যবিত্ত মেয়েরা নিজেরাও এ ব্যবসার প্রশিক্ষন নিয়ে বিউটি পার্লার চালাতে উদ্যেগী হন, তাতে করে বিউটি পার্লার মানেই চায়নীজ কিংবা হংকং এ ধারনাটা পালটে যায়। ক্লান্তিময় নগরজীবন থেকে অব্যহতি পেতে অনেকেই ঈদের ছুটি ছাটায় সেন্টমার্টিন, কুয়াকাটা কিংবা সুন্দরবনে বেড়াতে যেতেন।

মোবাইলের ব্যবহারের কারনে কিংবা অন্তর্জালের সহজ লভ্যতার জন্যেই হোক আশঙ্কাজনকভাবে পরকীয়া প্রবনতা বৃদ্ধি পায়। এজন্য অনেকে সন্তানের জীবন নিতেও পিছপা হননি। সাহসী কিছু ছেলে মেয়ে এসময় লিভ টুগেদার করতেন। ইভ টিজিং এর ঘটনায় মেয়েদের আত্মহত্যার হার যেকোন দেশের যেকোন কালের রেকর্ড ছাড়ায়। কিন্তু সবচেয়ে আর্শ্চয্যের ব্যাপার হলো এনিয়ে সুশীল সমাজ বিশেষ করে মহিলা মহল একে বারেই চুপচাপ ছিলেন। তাদেরকে কোন ধরনের মানব বন্ধন, প্রতিবাদ সভা, নিদেন পক্ষে পত্রিকায় দু একটা কলাম লিখতেও দেখা যায়নি।

২০১০ সালের ১৩ই নভেম্বর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টে পূর্ববর্তী সরকার থেকে পাওয়া ১৬৮ কাঠা আয়তনের সুরম্য প্রাসাদ থেকে সেনাবাহিনী বের করে দেন। জননেত্রী কেনো সেনাবাসে থাকবেন এবং প্রচন্ড ধনী হওয়া সত্বেও কেনো তিনি সরকারী সম্পদ এখনো ভোগ দখল করবেন এই ছিল তখনকার সবার যুক্তি। ২৯শে নভেম্বর হাইকোর্টের রায়ে তিনি আইনি লড়াইয়েও হেরে যান এবং বাড়িটির দাবী তাকে আপাতত ছাড়তে হয়।

তানবীরা

৩০।১০।২০১০

Thursday 21 October 2010

৯০ এর ঢাকা ---- মধ্যবিত্তের চোখে

নব্বইয়ের ঢাকায় বাচ্চারা স্কুলে টিফিনে খেতো বোম্বে সুইটসের রিং চিপস, বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া ফুজি নুডুলস, কিংবা কেনা বার্গার। নানাধরনের উন্নত মিল্ক চকোলেট, ক্যাডবেরীও তখন বাচ্চাদের মেনুতে খুব জনপ্রিয়। সেসময় ঢাকায় মধ্যবিত্তদের কাছে আসে পিজা, শর্মা, হেলভেসিয়া মানে ফ্রাইড চিকেন। এর আগে বাইরে খেতে যাওয়া মানে ছিলো চায়নীজ কিংবা কাবাব। সেই সময় চায়নীজ রেষ্টুরেন্টের লোকেরা সিচুয়ান ষ্টাইল, থাই এগুলো নিয়ে আসেন। যদিও এখনো আমি ঢাকার চায়নীজ, সিচুয়ান ষ্টাইল আর থাই রান্নার মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য করতে পারি না। ডলসি ভিটার আইসক্রীম, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ এগুলো জনপ্রিয়তা পায়। ছোট ছোট আইসক্রীম পার্লার, ফাষ্ট ফুডের দোকান গজিয়ে ওঠার সময় সেটা। গুলশানে একটি ফাষ্ট ফুডের দোকান হলো তখন “হট হাট” যাতে সেই সময়ের হট গার্লস আর বয়েসরা যেতেন। আর ধানমন্ডিতে ছিলো “খাই খাই”। ওয়েষ্টার্ন গ্রীলের জনপ্রিয়তাও তখন বেশ তুঙ্গে। উত্তরাতে লেকের মধ্যে বোটিং আর তারপর কাবাব খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। লিটার কোকের বোতল এবং লিটার বক্সের আইসক্রীম মধ্যবিত্তের ডাইনীং এ তখন অনেক স্বাভাবিক একটি ঘটনা। নিউমার্কেট গাওছিয়া্র খাবারের দোকানের কল্যানে অনেক মহিলারাই তখন বীফরোল, চিকেন প্যাটিস, জ্যামরোল, ভেজিটেবল রোল এগুলো শিখতে আগ্রহী হলেন। প্রায়ই নানা জায়গায় রান্নার কোর্স দেয়া শুরু হলো। আগ্রহী অনেক মহিলাই তখন এধরনের খাবার দোকানে সাপ্লাই দিয়ে সংসারের অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়েছেন।

ক্রিকেট তখন খুবই জনপ্রিয় খেলা বাংলাদেশে। বিরানব্বই সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের খেলা টিভিতে দেখানো হচ্ছিল। পাকিস্তানী খেলোয়ার ইনজামামুল হক সেসময় তার আনপ্রেডিকটেবল ব্যাটিং এর জন্য খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেন। মধ্যবিত্তের কাছে ভারতীয় – পাকিস্তানী ক্রিকেট খেলোয়াররা সবসময়ই জনপ্রিয়তার দিক থেকে অষ্ট্রেলিয়ান ইংলিশদের থেকে এগিয়ে। সেসময় থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের দিকেও খেলোয়ারদের নজর পরতে থাকে। ৯৭ এর আইসিসি ট্রফি জয়ের মতো উৎসবমুখর মুহূর্ত বোধহয় দেশে কম এসেছে। এবং নিরানব্বই সালে বাংলাদেশ সর্বপ্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশগ্রহন করে। ক্রিকেটের পরে ফুটবলতো ছিলই। আবাহনী আর মোহামেডান ক্রেজ তখনও মধ্যবিত্তের হৃদয়ে। আজকাল যেমন ক্রিকেট ছাড়া অন্যকোন খেলা নিয়ে ঢাকায় আলোচনা হয় না সেরকম দুরবস্থা তখনো ফুটবলের হয়নি। আশির দশক থেকে অনেক দিন নিয়াজ মোর্শেদ বাংলাদেশের দাবাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংগনে তুলে রাখেন। সাতার আর শ্যুটিং নিয়েও তখন অনেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রাংগনে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

বাংলাদেশের সিনেমার বেহাল দশাকে ঠিক করতে তখন কেউ কেউ আর্ট ফ্লিমের সাথে সাথে মূলধারা সিনেমাতেও আগ্রহ প্রকাশ করেন। এই আগ্রহের সূত্র ধরেই তখন জনপ্রিয় ভারতীয় সিনেমা কেয়ামত সে কেয়ামত তাক এর বাংলা অনুবাদ তৈরী হয়, কেয়ামত থেকে কেয়ামত। মৌসুমী ও সালমান শাহ এর মতো সুন্দর, স্মার্ট ও গুনী শিল্পীর অভিষেক হয় আমাদের দেশের চলচিত্রশিল্পে। হাস্যকর মেকাপ, ড্রেসাপ, চুলের ষ্টাইলের পরিবর্তন ঘটাতে সাহায্য করেন এই দুই অভিনেতা অভিনেত্রী। প্রচুর মধ্যবিত্ত দর্শক সিনেমা হলে ফিরে যান এছবিটি দেখার জন্য। অনেক শিক্ষিত ছেলে মেয়ে সিনেমাকে পেশা হিসেবে নেয়ার চিন্তা করেন। মৌসুমী আর সালমান পরিনত হন সকল কিশোর – যুবতীর হার্টথ্রবে। ছিয়ানব্বই সালে অপ্রকাশিত কোন কারনে সালমান শাহ আত্মহত্যা করেন, তিনি তখন এতোটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে তার মৃত্যুর দুঃখ সইতে না পেরে তার ভক্তও আত্মহত্যা করেন। সালমান মৌসুমীর পরেই ফেরোদৌস রিয়াজ এদের অভিষেক ঘটে। বাংলা সিনেমা যা প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিলো তা শেষ থেকে আবার শুরুর দিকে হাটতে শুরু করে।

নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে ক্যাবল টিভির আগমন ঘটে। অনেকের বাসার ছাদেই তখন খুব সুন্দর বড় ডিশ এন্টিনা দেখা যেতো। অনেক সময় ছাদে কাউকে এন্টিনা ঘোরাতেও দেখা যেতো। তবে যাদের এন্টিনা ছিলো না তাদের জন্য বিটিভির মাধ্যমে প্রথমে সিএনএন তার সস্প্রচার শুরু করে। মধ্যবিত্তের জন্য আসে অন্যধরনের সমাধান। ভিডিও ক্লাবগুলো নিজেরা বিশাল ক্যাপাসিটির এন্টিনা কিনে বাসায় বাসায় মাসিক একটা মাসোহারা ঠিক করে ক্যাবল টিভির লাইন দিতে লাগলেন। এরপর ভারতীয় টিভি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল, ডিস্কোভারী, কার্টুন নেটওয়ার্ক সবই মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে চলে এলো। এর প্রচন্ড প্রভাব পরলো মধ্যবিত্তের জীবন যাত্রায় বিশেষ করে পোষাক শিল্পে। শাড়ির মার্কেট আর পোষাকের ডিজাইন ভারতীয় টিভিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতে লাগলো সাথে সাথে মধ্যবিত্ত মেয়েদের কাছে জীন্স, টিশার্ট, স্কার্ট, লংড্রেস অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেলো। যারা বাইরে যেতেন শপিং করতে তাদের বাদে মধ্যবিত্ত বাকি সবাই বংগবাজার, দোজা ইত্যাদি মার্কেট থেকে তাদের চাহিদা মেটাতেন। মুম্বাই টিভির কারনে হেয়ার স্টাইলে ডায়ানা-কাট, মাধুরী-কাট ছিল দেখার মতোন বেশি, আর ছেলেদের ক্ষেত্রে সামনে ছোট কিন্তু ঘাড় ছাড়াইয়ে চুল রাখা যা কিনা সঞ্জয় দত্তের স্টাইল ছিল অনেক দেখা যেত, ৯২-৯৩এর দিকে ছেলেরা জিনস আর কেডসের সাথে ব্যাপকহারে চুলে রাহুল কাট প্রয়োগ শুরু করে। মেয়েদের প্রসাধন ও রূপচর্চা একটা টপিক্যাল বিষয়ে পরিণত হয়। দশকের শেষদিকে চ্যানেল আই শুরু হলে কানিজ আলমাস আর ফারজানা শাকিল টিভিতে রুপচর্চার ব্যাপারে প্রচুর অনুষ্ঠান করেন।

ভারতীয় শাড়ি আর থ্রীপিসের সাথে প্রতিযোগিতা করে তখন দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত। ভারতীয় কাপড় মানেই স্ট্যাটাস আর স্টাইল এধারনাটা কিছুটা তখন মার খায়। শুধু মেয়েদের জামা কাপড়ই নয় ফ্যাশন হাউজগুলো তখন ছেলেদের জন্যও ভালো ভালো পাঞ্জাবী তৈরী করছেন। তাদের তৈরী বিভিন্ন ফ্যাশনের গয়না, জুতো, ঘর সাজানোর জন্য বিভিন্ন রকমের কাঁথা স্টীচের, এপ্লিকের, বাটিকের চাদর, কুশন কভার তখন মধ্যবিত্তের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। বিবিয়ানা, আড়ং, নিপুন, ভূষন, ভুবন, প্রবর্তনা এরা সেসময়ের উদাহরন। বিভিন্ন ফ্যাশন ম্যাগাজিনগুলো তখন ঈদ উপলক্ষ্যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন। তাদের এই আয়োজন ও পুরস্কার বিতরন ফ্যাশন হাউজগুলোর ঈদের বিক্রিকে অনেকটাই প্রভাবিত করতো।

সেই ক্যাবল টিভির যুগেও হুমায়ূন আহমেদের “কোথাও কেউ নেই” ধারাবাহিক নাটকটি মধ্যবিত্ত দর্শকদের প্রচন্ডভাবে আকর্ষন করে। এই নাটকটি নিয়ে মিছিল পর্যন্ত হয় ঢাকায়। বাকের ভাইয়ের চরিত্রে আসাদুজ্জামান নূর আর মুনা চরিত্রের সুর্বনা তখন ঢাকায় খুব জনপ্রিয়তা পান। পাড়ায় পাড়ায় বাকের ভাইদের মধ্যে লাল শার্ট পরার একটা প্রবনতা চোখে পরে সাথে চোখে কালো রোদচশমা আর হাতে নানা ধরনের ব্রেসলেট। নব্বইয়ের দশকে জাহিদ হাসান, শমী কায়সার, বিপাশা হায়াত, তৌকির নতুন প্রজন্মের প্রতীক ও আর্দশ ছিলেন। নোবেল- ফয়সা্লের বিজ্ঞাপন নিয়ে হৈহুল্লোড় শুরু হয়। তখনই হঠাৎ করে এক পর্বের নাটকের বদলে খন্ড নাটক বানানোর হিড়িক পরে। নাটক নিয়ে অকারনেই বাইরের লোকেশনে যাওয়া, নাটকে গান ঢুকিয়ে দেয়া এগুলোর শুরু হয়। বিটিভি ডিশের প্রভাবে প্যাকেজ প্রোগ্রাম নামের রেডিমেড কিছু কিনতে শুরু করে। তবে সে সময় ঢাকায় খুব ভালো ভালো মঞ্চ নাটক হতো। জাহিদ হাসান অভিনীত “বিচ্ছু” দেখার জন্য টিকিট পাওয়া মুশকিল ছিলো। হুমায়ূন আহমেদের লেখা “মহাপুরুষ”, তারিক আনামের পরিচালনায় “কঞ্জুস”, হাতহদাই, রক্তকরবী ইত্যাদি নাটকগুলো তখন মহিলা সমিতি আর গাইড হাউজে মঞ্চায়িত হতো। সে সময় টিভিতে ইংলিশ সিরিয়ালের পাশাপাশি এশিয়ান সিরিয়াল দেখানো শুরু হয়। এরমধ্যে অনেকগুলো খুবই দর্শক নন্দিত হয়েছিলো। একটির নাম মনে পড়ছে “এগেইনষ্ট দ্যা উইন্ড”। এর হিরোর নাম ছিল সম্ভবত, “ক্যানি”। আমার আর আমার ছোট বোনের দুইজনের হিরো। আমরা দুইবোন রোজ, ও আমার ও আমার বলে ঝগড়া করতাম, আমি গানও গাইতাম ক্যানি আমার ক্যানি, আমার প্রিয় ক্যানি, ক্যানি আমার চাই। আমার দাদু তেড়ে ওঠতেন তার নামাজের বিছানা থেকে, তোর লজ্জা নাই বলে। চশমা পরা দুঃখী দুঃখী চেহারার শুটকো হিরো ছিল “ক্যানি”। নব্বইয়ের দশক থেকেই বিটিভি তাদের সারাদিনের সম্প্রচার কাজ শুরু করেন। , ঈদে একটানা তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠান দেখানো তখন থেকেই শুরু হয়। টিভিতে বাংলায় ডাবিং করা সিরিয়াল প্রচারের সূচনা হয় এ দশকে। প্রথমে সোর্ড অফ টিপু সুলতান।লাইন ধরে বিচিত্র বাংলায় ডাবড হয়ে আসতে থাকে ডার্ক জাস্টিস, আকবর দ্য গ্রেট, থিফ অফ বাগদাদ, সিন্দাবাদ, রবিন হুড ইত্যাদি। সিন্দাবাদের মিভ আর রবিন হুডের মেরিঅ্যানের পোশাকের নেকলাইন বিটিভি-নির্ভর মধ্যবিত্ত চোখকে বড় ধরণের ঝাঁকুনি দেয়। তবে মূলত গৃহকর্মীদের কারণে সবাই যেটা দেখতে বাধ্য ছিলেন তার নাম অ্যারাবিয়ান নাইটস বা আলিফ লায়লা। জাপানি সিরিয়াল "ওশিন" তুমুল হিট ছিল তখন।

টিভি তখন মধ্যবিত্তজীবনে অনেক প্রভাব বিস্তার করে। অভিনেতা শাহরুখ খান থেকে ক্রিকেটার ইমরান খান, মাধুরী দীক্ষিত থেকে জেনিফার লোপেজ এর ছবি তখন নিউমার্কেটে ত্রিশ টাকা দরে বিক্রি হতে শুরু করে। কারো বাড়িতে গেলে কাউকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজ়ন নেই কে তোমার পছন্দের হিরো কিংবা খেলোয়ার। দেয়াল ভর্তি ভর্তি সাটা আছে টম ক্রুজ কিংবা রিকি মার্টিন। মধ্য নব্বইয়ে ওয়াকিটকির মতো বিশাল সাইজের মোবাইল ফোন তখন ঢাকার কিছু মধ্যবিত্তের হাতে ঘুরছে। যদিও নেটওয়ার্ক বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা তখন মোবাইলের জন্য খুবই অপ্রতুল কিন্তু অনেকটা শোঅফ বা স্ট্যাটাস সিম্বল হয়ে মোবাইল যন্ত্রটি কারো কারো হাতে ঘুরতো। নব্বইয়ের শেষ দিকে অবশ্য অনেকেই মোবাইল ব্যবহার করতে শুরু করেন। ভ্যালেইন্টাইন ডে, ফ্রেন্ডশিপ ডে, পহেলা ফাল্গুন এধরনের দিনগুলো উৎসব রূপে ঢাকায় নব্বই এর দশকেই জনপ্রিয়তা পায়। বাংলাদেশের একমাত্র ছুটি কাটানোর জায়গা কক্সবাজার সেসময় মধ্যবিত্তের কাছে ধরা দিলো। বিভিন্ন কারনে – অকারনে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘট ঘট কক্সবাজার ছোটা তখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিল। নব্বই দশক থেকে ফ্ল্যাট কালচারের প্রচলন শুরু হয়, মার্কেট কালচারেরও। নিজেদের বাড়িঘর ভেঙ্গে ফ্ল্যাট বানানো আর রাস্তার পাশে বাড়ি হলে তাকে মার্কেট বানানো। প্রথমে ফ্ল্যাট মধ্যবিত্তদের ব্যাপার থাকলেও পরে ধানমন্ডি, গুলশান, বনানীতে এটা মহামারীরুপ নেয়। ফ্ল্যাটের কল্যানেই অনেক উচ্চ মধ্যবিত্ত তাদের আবাসস্থান পরিবর্তন করে গুলশান ধানমন্ডিতে নিজেদের আবাসিত করেন।

ঢাকায় বিভিন্ন উপলক্ষ্যে তখন খুব ওপেন এয়ার কনসার্ট হতো। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে নবীন বরন উৎসব, ইডেনের নবীন বরন উৎসব, পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি উৎসবগুলো ছিল মূখ্য। ছেলেদের কলেজে মেয়েদের যাওয়া মানা হলেও ছেলেরা মেয়েদের কলেজের কনসার্টের সময় আশপাশে ঘুরঘুর করতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার ছিল, একবার বি।এন।পি থেকে নবীন বরন দেয়া হতো, একবার আওয়ামীলীগ থেকে আর একবার থাকতো নিজস্ব বিভাগের তরফ থেকে। আওয়ামী আর বি।এন।পির মধ্যে আবার একটা প্রতিযোগিতা থাকতো কারা কতো দামী ব্যান্ডকে আনতে পারে। আমাদের সময় নিজস্ব নবীন বরন ছাড়াও পরস্ব নবীন বরনের কনসার্ট উপভোগ করার একটা রেওয়াজ চালু ছিলো। সেসুবাদে কোচিংমেট, কলেজমেট, স্কুলমেট, পাড়ামেট কে কোথায় ভর্তি হলো তার একটা খোঁজ পাওয়া যেতো। মাগনায় নির্মল বিনোদনের এরচেয়ে উৎকৃষ্ট উপায় আমাদের তখন জানা ছিল না। সংবাদপত্র জগতে বিষয়বৈচিত্র্য, রুচি সবকিছু মিলে ব্যাপক নতুনত্ব দেখতে পায় পাঠক। প্রিন্ট মিডিয়ায় কর্পোরেট পুঁজি বিনিয়োগের ব্যাপারটির সঙ্গেও আমাদের পরিচিতি ঘটে এই দশকে। পত্রপত্রিকার পাঠক সংগঠনগুলো সৃজনশীলতা চর্চা শুরু করেন।

সেই সময় সারা ঢাকা শহর জুড়ে ব্যাঙ এর ছাতার মতো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের পাশাপাশি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিও গজাতে শুরু করলো। বড়লোকের ছেলেমেয়েরা বিদেশি লেটেষ্ট মডেলের গাড়িতে চড়ে ব্যাঙ্কক সিঙ্গাপুরী ব্র্যান্ডের সানগ্লাস চোখে দিয়ে সেখানে পড়াশোনা শুরু করে দিল। আমাদের যাদের মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সামর্থ্য নেই, তারা ষোল থেকে বিশ হাজার ছাত্র ছাত্রীদের সাথে প্রতিযোগিতা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে উলটা ভাব নেয়ার চেষ্টায় থাকি, ঢাকাতে যারা কৃতকার্য হয় না তারাই প্রাইভেটে পড়তে যায়। বলাতো যায় না রোজ বিশ টাকা রিকশা ভাড়া বাঁচানোর জন্য ইউনিভার্সিটির বাসে করে বাড়িতে চলে আসি আর সেই টাকায় টি।এস।সিতে দুপুরে একপিস ছোট মাংসের টুকরা দেয়া তেহারী আর কোক খেয়ে পাবলিক লাইব্রেরীতে গুলতানি করি। তখনই আন্ডারগ্রাডদের বিদেশে পড়তে যাওয়ার ট্রেন্ড শুরু হয়। আগে জানতাম লোকে পি।এইচ।ডি, এম, এস, পোষ্ট ডক করতে বিদেশে পড়তে যায়। কিন্তু সাধারন অনার্স, বিবিএ, কম্পিউটার সাইন্স মার্কা সাবজেক্টে অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, লন্ডন, এ্যামেরিকা নিদেন পক্ষে ইন্ডিয়া যাওয়ার চলও সেই নব্বইয়ের দশক থেকেই। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় এম সি কিউ পদ্ধতি চালু হয় বিরানব্বইল সাল থেকে।

নব্বই দশকের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিলো ঢাকার জন্য “এরশাদ সরকারের পতন”। প্রতিবার ফাইন্যাল পরীক্ষার আগে এরকম একটা হরতাল, আন্দোলন, কার্ফিউ এর ঘটনা ঘটতো। এটা শীতকালে স্বাভাবিক বলে আমরা তখন জানতাম। ঢাকায় বন্যা আর হরতালের কারনে স্কুলে বিরাট ছুটি পাওয়া যেতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্দোলন করবে, কেউ কেউ মারা যাবে, ছাত্ররা বাস পুড়িয়ে দিবে, এরশাদ মানুষের মিছিলে ট্রাক তুলে দিবে। তখন কিছুদিন স্কুল বন্ধ থাকবে, পরীক্ষার ডেট চেঞ্জ হবে, আব্বুরা বাসায় থাকবে আমরা ইচ্ছেমতো দুষ্টামী করতে পারবো না, কিন্তু আব্বু বাসায় থাকা উপলক্ষ্যে ভিডিও ক্লাব থেকে ভালো ভালো সিনেমা আনা হবে, পড়তে হবে না কারন পরীক্ষা অনিশ্চিত। আর আম্মি ভালো ভালো রান্না করবেন। যেকোন সময় যেকোন এ্যাডভাঞ্চার প্রিয় মেহমানও আসতে পারেন এই গলি, সেই গলির চিপা দিয়ে হরতালকারী আর পুলিশের দৃষ্টিকে ফাঁকি দিয়ে। আব্বুরা হয়তো তাসের আড্ডা বসাবেন। সিটি কলেজের সামনে, কিংবা নিউমার্কেটের সামনে নীলক্ষেতে টোকাইদের দিয়ে নেতারা টায়ার পুড়াবেন। সেই পোড়া গন্ধ কলাবাগান, শুক্রাবাদ পর্যন্ত আসবে। আমরা সবাই ছাদে দৌড়ে যাবো, সেই সময় সাইরেন বাজিয়ে পুলিশ সেখানে যাবে যাতে সাইরেনের আওয়াজ পেয়ে টায়ার পুড়ানেওয়ালারা দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে পারে। কিন্তু সেবার যে এরশাদ সত্যিই সত্যিই ক্ষমতা ত্যাগ করবেন, দুই নেত্রীকে গৃহবন্দী করা বাদ দিয়ে সেটা ছিল অপ্রত্যাশিত। বাংলাদেশ একানব্বইতে সত্যি সত্যি স্বৈরাচারমুক্ত হলো, আসলেই কি? দৈনন্দিন জীবনে এরশাদ পরবর্তী সরকারদের সাথে আমি এরশাদ সরকারের খুব একটা অমিল পাই না।

আমরা যারা যুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্ম, যুদ্ধ – রায়ট যাদের কাছে ইতিহাসের বই, টিভির নাটক কিংবা সিনেমা মাত্র ছিল। তারা বিরানব্বইয়ে বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার কল্যানে সেটা স্বচোখে দেখলাম। প্বার্শবর্তী দেশের তান্ডব আমাদের দেশকেও কিছুটা ছুঁয়ে গেলো। সারাদেশে কিংবা ঢাকায় কার্ফিউ ছিল তখন। বিটিভি সিএনএনের রায়টের সংবাদের সময় সেন্সর করে সিএনএন পযর্ন্ত অচল করে রাখতো। ধর্মের নামে মানুষ মারা কোন প্রাগৈতিহাসিক ঘটনা নয়। এটা এখনো ঘটে জানলাম তখন নতুন করে। খালেদা জিয়ার আমল তখন, তিনি আগের দিনের সাদা সূতীর শাড়ি বদলে নতুন ফ্রেঞ্চ ফ্যাশনে টিভিতে আসেন সাথে একটা ম্যাচিং ওড়না। খালেদা জিয়ার এই ওড়না ফ্যাশন তখন মধ্যবিত্ত খালাম্মাদের আক্রান্ত করে ফেললো। ম্যাডামের মতো ফ্রেঞ্চ না পাক তাতে কি, সূতী, সিল্ক, ম্যাচিং, কন্ট্রাষ্ট যে ধরনেরই হোক ওড়না তাদের শাড়ির ওপর শোভা পেতে লাগলো। সেই সময় আনন্দ বিচিত্রা একটি জরিপ চালায় তারকাদের মধ্যে, কাকে তারা সবচেয়ে সুবেশী মনে করেন। ষোলজন সম্ভবত খালেদা জিয়ার নাম করেন, এই ষোলজনের মধ্যে তারকা সুর্বনা ও চম্পা ছিলেন সম্ভবত যারা খালেদা জিয়াকে সবচেয়ে সুবেশী মনে করতেন। ৯১ সালের (সম্ভবতঃ) সবচেয়ে আলোচনাকারী ঘটনা ছিল শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে "ঘাতক দালাল নিমূর্ল কমিটি" গঠন করে গন আদালতের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করা। আন্দোলন তৈরী করা।

এই দশকেই যায় যায় দিন সাপ্তাহিকের নির্বাচিত কলামের লেখিকা তাসলিমা নাসরিনকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। তিনি বির্তকিত ছিলেন তার ব্যাক্তিগত জীবন সাথে তার লেখার জন্য। আজো তার নির্বাসন জীবনের অবসান ঘটেনি। মৌলবাদী শক্তিকে রুখার বদলে সব সরকারই তাদের সাথে আঁতাত রাখেন। একজন নিরস্ত্র ভদ্রমহিলা যিনি লেখিকা, তাকে লেখা দিয়ে বধার বদলে শক্তিশালী পুরুষরা সবাই লাঠি সোটা দা নিয়ে ঢাকা কাঁপিয়ে মিছিল করেছেন। আমাদের অসহায় পুলিশ বাহিনী তাকিয়ে তাকিয়ে তা দেখেছে, কিছুই করতে পারেনি। সারা বিশ্ব এই বর্বর দৃশ্যটি দেখেছেন। কিন্তু আজো তিনি যা যা বলেছেন তার বিপক্ষে কোন যুক্তি নিয়ে এসে তার লেখাকে কেউ খন্ডন করেনি। ৯৮ সালে ভয়াবহ বন্যায় সারাদেশ ডুবে যায়। সারা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশ আবার তার অসহায়তার জন্য কভারেজ পায়। নব্বইয়ের দশকে কম্পিউটার মধ্যবিত্তের ঘরে আসে। গেম খেলা চলতো তখন ভীষন ভাবে। অনেক শৌখিন ব্যবহারকারী তখন উচ্চমূল্যে অন্তর্জাল ব্যবহার করতেন। অর্ন্তজাল ব্যবহারের মধ্যে একটা জিনিস তখন প্রচন্ড জনপ্রিয় ছিল তাহলো চ্যাটিং। এম।এস।এন কিংবা ইয়াহুর মাধ্যমে চ্যাটিং।

তানবীরা
২১.১০.১০

এই লেখাটা লিখতে যেয়ে মনে হলো বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা দিচ্ছি। সব গ্লোবাল পড়া আছে, মুখস্থ নাই কিছু। এখন নিজের কেদরানী দিয়া কি করে বিলাসীর চরিত্র অঙ্কন করা যায়। ইস্মৃতিতো বহু আগে থেকেই প্রতারনা করছে। এতোদিন ভরসা ছিল “গুগল”। কিন্তু ডিজ়িটাল বাংলাদেশের কোন সেক্টরের কোন তথ্য গুগল করে পাওয়া!!!!

কৃতজ্ঞতাঃ নুশেরা + জেবীন + নড়বড়ে