আমার শেষ লেখাটির কিছু দুর্বল দিক, এক পাক্ষিকতা আমার কোন কোন শুভানুধ্যায়ী আমার কাছে তুলে ধরেছেন। আমাকে "র্যাশনাল" হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন। লেখাটি যেহেতু পাবলিক আছে, আলোচনাও পাবলিক থাকা জরুরী।
সেই মেয়েরা কেন ফোন নম্বরগুলো ব্লক করে নি? কেন তারা বিভিন্ন নামে সেইভ করেছিলো? একটি নামে সেইভ করলেই তো পারতো। “কুত্তা” শব্দটি খুব যৌনউদ্দীপক। কার এত ঠ্যাকা পরেছিলো, দিনের পর দিন সাড়া না পেলেও “মিসকল” দিয়ে যাওয়ার? নিশ্চয়ই মেয়েগুলো’ও মজা পাচ্ছিলো।
আমি নিজেও বিভিন্ন নামে “নম্বর”সেইভ করতাম। একটা সুবিধা অনুভব করতাম, কোন কোন মানুষের ঠ্যাকা শেষ, কার কার অত্যাচার এর হাত থেকে মুক্তি পেলাম, জানা সুবিধে হত। হ্যাঁ, হয়ত দরকার ছিলো না কিন্তু সুবিধে লাগতো। ২০১৪ সালে যখন বাংলাদেশে যাই, তখন অযাচিত ফোনের হাত থেকে বাঁচার জন্যে “আইফোন” এর “কল ব্লকিং এন্ড আইডেনটিফিকেশান” অপশন’টা ব্যবহারের চেষ্টা করেছিলাম। কাজ করে নি, জানতে পেলাম শুধু “গ্রামীন ফোন” প্রোভাইডারের এই সুযোগ আছে, অন্য প্রোভাইডারদের নেই। আমি “বাংলালিঙ্ক" এর গ্রাহক।
এখন আমাকে জানালো হলো, যে কোন প্রোভাইডার’কে ফোন দিয়ে বললেই, যে কোন নম্বর ব্লক করা সম্ভব, সামান্য কিছু ফী’জ এর বিনিময়ে। আর এটা নাকি দেশ জুড়ে সকলেই জানে। আমি জানি না, জানতাম না – অন্যদের জন্য এই জায়গাটুকু ওপেন রাখলাম।
আমি যে পরিবারে বড় হয়েছি, সেখানে গালি দেয়া সম্পূর্ণ নিষেধ ছিলো। যত কিছুই হোক, গালি দিলেই চরম শাস্তি। এখন মা-বাবার সাথে না থাকার ফায়দা উঠিয়ে, চরম ভাবে গালি দেই, আর সবার আগে, “কুত্তার বাচ্চা” দেই। এবং কসম কি কসম, কোন রকম উদ্দীপনা থেকে দেই না, চরম তিতি বিরক্তি থেকেই দেই।
প্রসংগতঃ সুইডেনে এক মিলিয়নের বেশি নারী #Metoo ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়েছে। এ নিয়ে সেখানে মিডিয়াতেও
ব্যাপক প্রচার হয়েছে। এবার #IHAVE হ্যাশট্যাগ নিয়ে
পুরুষরা ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। মেয়েদের প্রতি ন্যুনতম খারাপ আচরণ থেকে শুরু করে
সব ধরনের সেক্সুয়াল অসদাচরণ যারা করেছে,
তাদের
স্বীকারোক্তিমূলক ক্যাম্পেইন এটি। চলেন দেখি, “MeToo” এর পাশে কত গুলো হ্যাশ ট্যাগ জমা হয়। নারীদের প্রতি সহিংসতায় “চতুর্থ খারাপ নগরী ঢাকা”, এটা বৈশ্বিক রিপোর্ট, উইম্যান্স চ্যাপ্টার বা সুপ্রীতি দি কিংবা আমার মত "ইর্যাশনাল" কারো বানানো কিছু নয়। এক কোটির বেশি মানুষের বসবাস এমন ১৯টি মহানগরে এক জরিপের
মাধ্যমে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন এ তালিকা তৈরি করেছে। ৩৮০ জন বিশেষজ্ঞের মতামতের
ভিত্তিতে এ জরিপ করা হয়েছে। তারপরও, কিছু হ্যাশ ট্যাগ তো আশা করা যেতেই পারে।
এরপর আসে সেই যুগান্তকারী "র্যাশনাল" প্রবাদ, “এক হাতে তালি বাজে না” আচ্ছা তাই কি?
কেন মেয়েরা’ই “রেপড” হয় আর খুন হয় এক তরফা? ছেলেরা কেন হয় না? আজ পযর্ন্ত কোথাও কি কোন ছেলে “রেপড” হয়ে “খুন” হয়েছে? যদি এক হাতে তালি না’ই বাজবে “জোর” করার প্রয়োজন কি? “খুন”ই বা কেন করে? দু বছরের শিশু থেকে আশি বছরের নারী সবার তালি দ্বারাই বেজে যান? আর এই প্রোভোকড ছেলে’রা এক তরফা’ই হয়। যে জায়গায় মেয়ে’রা রোজ অযাচিত স্পর্শ, শব্দ, অশ্লীল গান, অঙ্গ ভঙ্গি’র মধ্যে দিয়ে যায় তারা কিন্তু প্রভোকড হয় না, তারপরেও কি করে বলি আমরা অবলীলায়, এক হাতে তালি বাজে না?
একটা উদাহরণ না টেনেই পারছি না।
ধরুন, একটা মেয়ে আর একটা ছেলে দু’জনেই কাজের জন্যে বাইরে গেছে। ছেলেটি এবং মেয়েটি সমান পোস্টেই কাজ করে। রাতে হোটেলের বারে বসে “মেইল” চেক করছে, অফিসের টুকটাক কাজ সারছে। কাল সকালে প্রোডাক্ট লঞ্চ, খুব স্ট্রেসের মধ্যে আছে। ড্রিঙ্ক ছেলেটিও করছে, ড্রিঙ্ক মেয়েটিও করছে। মানসিক চাপ দুজনের’ই আছে। ছেলেটি, মেয়েটির দিকে চেয়ে হাসলো, মেয়েটি হেসে তার প্রতি উত্তর দিলো। টুকটাক কথা হতে থাকলো, কাজের কথা দিয়ে শুরু হলেও ব্যক্তিগত দিকে মোড় নেয়ার চেষ্টা শুরু হলো। অবস্থা আঁচ করে মেয়েটি নিজ কামরায় যাওয়ার প্রস্তূতি নিতে শুরু করলে ছেলেটি তাকে “ড্রিঙ্ক” কিনে দিতে, তার সাথে সময় কাটাতে নানা ভাবে উদ্বুদ্ধ করতে থাকে। যতক্ষণ মেয়েটি কঠিন কন্ঠে ছেলেটি’কে না বললো, আই কেইম হিয়ার ফো মাই ওয়ার্ক এন্ড আ’ম নট আ স্লাট”।
একজন আপনার সাথে হেসে কথা বললে কিংবা আপনার কথা’র
জবাব দিলেই প্রভোকড বা ইনভাইটেড ফীল করেন ক্যান ভাই? “ফ্র্যাজিল” তো আপনারা অনেক
বেশী। ছোটবেলা’র শোনা গানের মত, “কাছে এসে পাশে বসে কথা বলে যে, এ মন সে আমায়
ভালবেসেছে”?
যদিও দেখা যাবে সিরিয়াল দেখার সময় কিংবা খবরের কাগজ পড়ার সময়, এই ভদ্রলোকই মেয়েদের স্বভাব চরিত্র নিয়ে খুব বাজে মন্তব্য করছে কিংবা ওড়না ছাড়া বাইরে যাওয়া’র সামাজিক অবক্ষয়ের বিপক্ষে ফেসবুকে বিরাট এক প্রবন্ধ লিখে ফেলেছে।
মেয়েটি রাগে, ভয়ে, অপমানে কষ্টে কাঁপতে কাঁপতে যদি এই ঘটনা কারো সাথে শেয়ার করে, ছেলে বা মেয়ে নির্বিশেষে, যার সাথেই বলুক না কেন, তাহলে যে মন্তব্যগুলো কানে আসবে তা হলো,
বারে বসাই ঠিক হয় নি, রুমে বসে থাকা দরকার ছিলো।
বসলেও ড্রিঙ্ক করা উচিত হয় নি।
ড্রিঙ্ক করলেও ঐ ছেলেটি’র সাথে কথা বলা ঠিক হয় নি। তার বোঝা উচিৎ ছিলো, ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু মেয়ে বলে সে তো অফিসে’র কাজে কোন ছাড় পাবে না। তাহলে, মেয়ে বলে তাকেই কেন সব কিছু বুঝে বসে থাকতে হবে? বরং একটি মেয়ের মাথায় তো, অফিসের বোঝা’র বাইরে সংসার, সন্তান আরও কিছু বোঝা”র চাপ থাকে। একটা ছেলে’র
চেয়ে একটা মেয়ে এমনিতেই অনেক বেশি চাপ নেয়।
একই প্রশ্ন যুগ থেকে যুগ অব্ধি ঘুরতে থাকে,
কেন বাসে উঠলো মেয়েটি? ভাল মেয়ে’রা সন্ধ্যা রাতে একা বাসে ওঠে? শুনেছেন কখনো?
কেন মেলা’য় গেলো মেয়েটি? ভদ্রলোকেরা মেয়ে’রা কখনো মেলায় যায়? শুনেছে কেউ কখনো?
কেন বাড়ি’র বাইরে পা দিলো – সৃষ্টিকর্তা এ জন্যেই মেয়েদের চলাফেরা’য় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
কেন আসলে তারা জন্ম নিলো? সৃষ্টিকর্তা মেয়েদের
সৃষ্টি না করলেও তো পারতেন।
আর এই কাজ গুলো যারা করছে, সেই ছেলে গুলো কোন পরিবারের সন্তান? তাদের বাসে চড়া, মেলায় যাওয়া, বাইরে যাওয়া কিছুতেই কোন বাঁধা নেই কেন?
আচ্ছা, মেয়েরা চাঁদে গেছে জানেন তো? নাসায় কাজ করে মেয়েরা জানেন সেটা? ক্যান্সারের ওষুধের গবেষনায় মেয়েরা আছে, জানেন? মেয়েরা যে টাকা রোজগার করে তা দিয়ে ছেলেরা যত টুকু জিনিস দোকানে কিনতে পায়, ঠিক ততটুকুই পাওয়া যায়, অবাক কান্ড তাই না?
“এবিউজ” কথাটা’র মানে কি জানি সবাই? “এবিউজ” মানে
কিন্তু “ধষর্ন” নয়। অযাচিত প্রতিটি “স্পর্শ” “শব্দ” “দৃষ্টি” ইত্যাদি সবই বাই ল
এবিউজের আন্ডারে পরে, ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড। মেয়েরা “ফ্র্যাজিল” বলেই হয়ত এই আইন তৈরী
করা হয়েছে। দৃষ্টিতেই যেহেতু ভেঙ্গে পরে, তাই না? তবে, ছেলেরাও এই আইনের আশ্রয় নিতে পারে। “এবিউজ” আপনি ভারবালিও
করতে পারেন। “ঐ ছেমড়ি তোর ওড়না
কই” ভারবালি এবিউজ। এবিউজ কিন্তু মেয়েরাও করে। পাশের বাসা’র ভাবী’র স্বাস্থ্য
সংক্রান্ত আলোচনা কিন্তু ভারবাল এবিউজে’র মধ্যেই পরে।
আলিয়া ভাটের ভিডিওটি এই পোস্টেও যোগ করলাম, যাদের এবিউজ সম্পর্কে ধারনা স্পষ্ট নয় তাদের জন্যে।
ফেসবুকে দারুন দারুন কিছু লেখা পড়তে পাওয়া যায়।
যত সম্ভব ২০১৬ সালে ফারজানা নীলা সাদা-সাপ্টা এ ধরনের কিছু লিখেছিল,
কেউ শর্ট জামা পরে মানে এই না যে সে আপনার সাথে
শুতে চায়
কারো অনেক ছেলে বন্ধু মানে এই না যে সে সবার সাথে
শুয়ে বেড়ায়
কেউ তার প্রেমিকের সাথে থাকে মানেই এই না যে সে
সবার সাথে ঘুমায়
কেউ মদ সিগারেট খাওয়া মানেই এই না যে সে খুব সহজ
লভ্য
রাত বারোটা পর্যন্ত একটা মেয়ে বাইরে থাকার মানেই
এই না যে
সে কারো সাথে থেকে এসেছে
কেউ পেশায় মডেল বা নায়িকা মানে এই না যে সে
কলগার্ল
প্রমোশোন পেলেই ধরে নেবেন না বসের সাথে ইটিশ
পিটিশ আছে
কলগার্ল হলেও ধরে নেয়া’র কোন কারণ নেই, যে কেউই
চাইলে পাবে।
“মেয়ে” নিয়ে যাদের শুধু এই ভাবনা গুলো আসে তাদের
উদ্দেশ্যে লেখা ছিল।
এই লেখায় কি কি “ইর্যাশন্যাল” ভুল আছে, জানতে
অপেক্ষায় রইলাম। আলোচনায় বাঁধা নেই।
No comments:
Post a Comment