Thursday 2 November 2017

পেট্রপোল - ইন্ডিয়া

একবার বাই রোডে কোলকাতা যাচ্ছি, বাবা মা, বোনেরা সবাই। তখন নতুন নতুন মা হয়েছি, মেঘময় জগত আমার। সারাদিন মেয়ের পেছনে ছুটি। রাস্তায় কোথাও খাওয়ার বিরতি ছিলো। সবাই খেয়েছি এক সাথে আর আমি এর মাঝে মেয়েকে খাওয়াতে ও ব্যস্ত ছিলাম। নির্দিষ্ট সময়ের পর বাস ছাড়লো, আমরা সবাই বাসে উঠেছি, চলে এসেছি। বাস কোলকাতা নিউমার্কেটের কাছে থামবে থামবে সময়, একজন মোবাইলে কথা বলতে বলতে আমার দিকে এগিয়ে এলো।

আমাকে বললো, দিদি আপনার ব্যাগটা
আমি অবাক হয়ে বললাম, আমার? কি ব্যাগ?
উনি আমার চেয়ে অবাক হয়ে বললেন, ওহ, চেক করে দেখুন তো আপনার হাতের ব্যাগটি কোথায়?

আমি ওভার কনফিডেন্ট, একা একা মেয়ে নিয়ে আমি ট্রাভেল করি আমি, কখনো কিছু ভুলি না আর এই এত জরুরী ব্যাগ ভুলে যাবো!
কাভি নেহী হতেই পারে না। দিল হ্যায় কি মানতা নেহীর পূজা ভাটের মত, ব্যাগ যে হারিয়ে এসেছি, সেটা নিজেই জানি না। জানে, যে রেস্টুরেন্টে খেয়েছি তার লোক আর বাস কোম্পানীর লোক। বোনেরা সবাই মিলে খোঁজাখুজি করে নিশ্চিত হলাম, ব্যাগ অবশ্যই হারিয়ে এসেছি।

তারপর বাসের ম্যানেজার রাগ সামলাতে না পেরে বলল, ব্যাগ রেস্টুরেন্টে ফেলে এসেছেন দিদি। ওরা ফোন করেছে।

আমাদের সবার আক্কেল গুড়ুম। আমার ব্যাগে নিজের ডাচ পাসপোর্ট, মেঘের পাসপোর্ট, ক্রেডিট কার্ড, ব্র্যান্ডেড সানগ্লাস, নতুন কেনা মোবাইল সেট, ডলার, ইউরো, বাংলাদেশি টাকা, ভারতীয় টাকা  ইত্যাদি তো ছিল বটেই, শুধু আমার ছিলো না, সবার পাসপোর্ট ছিলো আমার ব্যাগে। আমি সাবধানী বলে জরুরী কাগজপত্র সব আমার কাছে রাখা হয়েছিলো।

পরবর্তী ধাপ হলো, সারাদিন সবাই জার্ণি করে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর, পাসপোর্ট ছাড়া কোন হোটেলে উঠতে পারবো না। পাসপোর্ট পেট্রাপোল আর এদিকে বাস নিউমার্কেটে পৌঁছে গেছে। এখন উপায়?

বাস কোম্পানীর ম্যানেজার আমাদের জিজ্ঞেস করলো, হোটেল কোনটা বুক দিয়েছেন? ওখানে নিয়ে গেলাম পর, ওনি নিজে জামিন হয়ে আমাদের হোটেলের কাগজ ফিলাপ করলো আর বললো, কাল এ সময় আবার বাস আসবে তখন, পাসপোর্ট, ব্যাগ সব পাওয়া যাবে।

প্রথমেই ধরে নিলাম কি কি জীবনেও পাবো না। পরিবারের সবাই আলোচনা করলাম, পাসপোর্ট বাদ দিয়ে আর কিছু পাওয়ার আশা নেই।
বাসায় ফোন করে ভাইয়াকে বললাম, দুলালকে বলো ভিসা কার্ড ব্লক করে দিতে, ব্যাগ লষ্ট।

সবাই এক সাথে আছি, আনন্দ হচ্ছে, তাইরে নাইরে করছি, ব্যাগের শোক ভুলে গেছি। পরদিন দুপুরে নিউমার্কেটে ঘুরছি তো ঘুরছিই।
আব্বু তাগাদা দিচ্ছে চল বাসের অফিসে যাই, পাসপোর্ট আনি। দুপুর পার করে গিয়ে দেখি, সেই ম্যানেজার ব্যাগ নিয়ে বসে আছে। রাগে কাঁপছে। হোটেলে ফোন করে জেনেছে, আমরা নেই, ঘুরতে বের হয়েছি। ব্যাগের চিন্তা বাদ দিয়ে আনন্দ করছি আর আবার এত দেরীতে এসেছি।
প্রথমে দিলো একটা ঝাড়।

ব্যাগ খুলে অবাক, প্রত্যেকটা জিনিস আছে, প্রত্যেকটা। শুধু একটা লিপিষ্টিক ছাড়া।

আমরা এখনও আলোচনা করি, কি করে এটা সম্ভব। পেট্রাপোল সেই রেস্টুরেন্টটা খুবই সাধারণ একটা ধাবা। তাতে কাজ করে আরও সাধারণ লোকজন। রেস্টুরেন্টের কর্মচারী, ম্যানেজার, বাস ম্যানেজার কেউই তো সে রকম কেউ নন।


উপমহাদেশ নিয়ে কথা হলেই নীচতা, অসততা কিংবা ঝগড়া, বৈষম্যের কথা আসে। অসততার হাজার গল্পের মাঝে এই গল্প গুলোও আসুক।

No comments:

Post a Comment