উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাওয়া মধ্যম আয়ের দেশ, “বাংলাদেশে”র প্রতিদিনের সংবাদপত্রে যে সংবাদটি থাকবেই,”মোস্ট কমন”
– সেটি হলো, গৃহবধূ হত্যা, গৃহকর্মী হত্যা, শিশু হত্যা, বাবা
আর মেয়ে হত্যা, মা আর ছেলে হত্যা। একটা মানুষকে চিরতরে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া
আর কোন ইস্যুর পর্যায়ে পরে না।
আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা আর শ্রদ্ধা বিস্ময়কর
পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। প্রায় প্রতিদিনই আইন শৃঙ্খলা
বাহিনী ধরা পরে ঘুষ সমেত। মদীনা সনদে চলা দেশে, কোমল অনুভূতি সম্পন্ন সব
ধার্মিক মানুষদের নীতি নৈতিকতা বোধের অবক্ষয় আর কোন উদাহরণের অপেক্ষা রাখে না।
পুলিশের হাত থেকে জনগনের মুক্তি নেই। তারা জনগনের দন্ডমুন্ডের কর্তা। বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, আর পুলিশে ছুঁলে ঘা থেকে
ক্যান্সার, এ জীবনে তার আর রক্ষা নেই। ব্যবসায়ী, কর্মজীবি, ছাত্র কাকে
না ধরে তারা? সেদিন এক গাড়ি ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে গিয়ে দশ লক্ষ
টাকা মুক্তিপন দাবী করলো, রফা হলো দেড় লক্ষ টাকায়। ব্যবসায়ী’র স্ত্রী গ্রাম, আত্মীয়
স্বজন সব কিছু একাকার করে টাকা আনলো, পুলিশ টাকা নিয়ে তার স্বামীকে
ছাড়বে না বলাতে ভদ্রমহিলা তার আঁচল পুলিশের গাড়িতে বেঁধে নিয়েছে আত্মহত্যা করার জন্যে। রাজপথে এই ঘটনার সাক্ষী হাজারও মানুষ, সাংবাদিক আর তাদের ক্যামেরা। বাধ্য হয়ে পুলিশ সত্তর হাজার টাকা ফেরত দিয়েছে
আর ভদ্রলোকের বিরুদ্ধে অন্য মামলা ঠুকে দিয়েছে। কেউ মামলা ঠুকেছে সে কারণে
আসামী গ্রেফতার করে নি, গ্রেফতার করে নিজেরা
মামলা ঠুকেছে। এই সংবাদ পত্রিকায় “হেডলাইন” হয়েছে পুলিশের নাম এবং ছবিসহ। আজ পাঁচ দিন রোজ পত্রিকা চেক করলাম, না, তাদের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেয়া’র কথা কোথাও পাইনি। পুলিশ এত বেশী খেলে যে মাঝে মাঝে সেইম সাইড (গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
সরকারের কর্মকর্তা’রা তো ধরা ছোঁয়া’র বাইরে
এক সাইড) হয়ে যায়। যেমন, একবার বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের এক কর্মকর্তাকে উঠিয়ে
নিয়ে নির্যাতন করা হলে, তৎকালীন গর্ভনর মুচালেকা দেন,
পুলিশের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনবেন না, কর্মকর্তা
ট্রমাটাইজড হয়ে মুক্তি পেয়েছিলেন। রক্ষক যেখানে সবসময়
ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে।
বছরের পর বছর “ধর্ম চিন্তা” বনাম “নৈতিকতা চিন্তা” চর্চার “ফলাফল”
কি হয়, এক সময় যে এর পরিনতি দুই মেরু দূরত্বে অবস্থান
করে তার উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সোনার “বাংলাদেশ”। ধার্মিক মানুষ’রা আপন সন্তানকে খুন করতে
পিছপা হন না, “গুনাহ” হলে মাফ তো আছেই। যদি “অন্যায়” হত তাহলে সাজা
হত এবং মাফ হত না। সাজার ভয় ইহকালেও তাদের নেই,
পরকালেও তাদের নেই। ইহকালও তারা ম্যানেজ
করতে পারবেন – পরকাল তো ম্যানেজ হয়েই আছে।
দেশে যে কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ আইন করে নিষিদ্ধ। অথচ পৃথিবীজুড়ে একটি উন্মুক্ত ও উদার পরিবেশের
উঁচু হাত ক্রমেই উঁচু হচ্ছে। এটা তো তথ্যপ্রবাহের
অবাধ যুগ। এখানে তো যে যেমন খুশি তেমন
মত প্রকাশ করছে। প্রতিদিন টেলিভিশনের টকশোগুলোতে
এক রাজনৈতিক দলের নেতা অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকে যা খুশি তা-ই বলছেন। আর ঠিক সেই সময়ে আইন করে নিষিদ্ধ করে
দেয়া হচ্ছে, কি লেখা যাবে আর কি লেখা যাবে না। “৫৭” ধারা যার নাম। ফোর্বস এর বিশ্বের ক্ষমতাশালী নারীর তালিকায় এঙ্গেলা মার্কেলের স্থান এবারও এক নম্বরে। এঙ্গেলা মার্কেল এর ছবিতে গোঁফ লাগিয়ে তাকে
হিটলার বানানো হয়, বোরখা পরিয়ে মুসলমান শারণার্থী বানানো হয়,
কিংবা বিকিনি পরিয়ে বসিয়ে দেয়া হয় অন্য কোনো রাজনীতিবিদের পাশে। সমালোচনায় আহত হয়ে টানা চতুর্থ
বার ক্ষমতায় থাকা এই নেত্রী তার নাগরিকদেরকে গ্রেফতার বা গুম করে তার ক্ষমতা দেখান
না। মজার বিষয় হচ্ছে- তিনি তার সমালোচনা বা তাকে নিয়ে ব্যাঙ্গচিত্রের প্রশংসাও করেন। কিন্তু বিশ্বের ৩০ তম ক্ষমতাশালী নারীর প্রশংসা ছাড়া সমালোচনা করার কোন রাস্তা তার চাটুকার’রা রাখেনি। আইন করে তার কাজের সমালোচনা বন্ধ করে দেয়া
হয়েছে। একটা সুস্থ শাসন ব্যবস্থা বিকাশ ও চলমান থাকার জন্যে গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে
গঠনমূলক সমালোচনার কোন বিকল্প নেই। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে
সিনেটররা স্বজন প্রীতির, দুর্নীতির মামলা ঠুকতে পারে আর বাংলাদেশে একজন পুলিশের
অসততার বিরুদ্ধে কথা বলার কোন সুযোগ জনগনের নেই। একজন পাতি নেতার বিরুদ্ধেও কোন
মামলা নিতে পুলিশ অপারগতা জানায়।
কারো সাথে কারো আর্দশিক দ্বন্দ্ব থাকলে, মতের অমিল থাকলে,
সেই মানুষটা যদি খুন হয় কিংবা তার যদি ক্ষতি হয় তাহলে কি সেটাকে নৈতিকভাবে
সমর্থণ করা যায়? যে কারণই থাকুক, একটা মানুষকে
বিচারহীন ভাবে প্রাণে মেরে ফেলা কি কোন মনুষ্যত্বের পর্যায়ে পরে?
আজকাল যখন দেখি, এততম বিসিএস পরীক্ষায় ততজন কৃতকার্য হয়ে এদিক
ওদিক নিয়োগ পাচ্ছে। তখন ভাবি, মুখস্থ বিদ্যার জোরে,
সিস্টেমের সুযোগ নিয়ে আর একদল যোগ হল, গোদের ওপর
বিষফোঁড়া। আবার বাড়লো রাষ্ট্রের দায়। জনগনের করের টাকায়, বেতন, বাড়ি, গাড়ি হাকিয়ে তাদের ওপরই লাঠি চালিয়ে ঘুষ খাওয়া
ছাড়া আর কোন কাজেই আসবে না। ঘুষের রেট ছাড়া
অতীতেও দেশে কোন পরিবর্তন আসেনি – ভবিষ্যতেও আসার সম্ভাবনা কম।
কারো কাছে জবাব চাইছি না। হতাশ বাংলাদেশ হতাশ তোমাকে নিয়ে। “সুবোধ
তুই
পালিয়ে
যা, তোর ভাগ্যে
কিছু নেই”
No comments:
Post a Comment